সুকুমার সরকার, ঢাকা: এবার বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অধ্যায়। সেইসঙ্গে আন্দোলনকালে পুলিশের গুলিতে 'শহিদ' আবু সাইদের নামে একটি নতুন গল্প যুক্ত করার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবইয়ের পিছনের প্রচ্ছদে থাকা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি। হাসিনার ছবির বদলে বইতে জুড়ছে জুলাইয়ে বিপ্লবের ছবি ও গ্রাফিতি। একইসঙ্গে ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এসব সংস্কারের পর নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেই খবর।
জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে তৈরি পাঠ্যবই পরিমার্জন করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এর পর নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে একাধিক বইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অধ্যায় যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। তারা বিষয়টি চূড়ান্ত করতে একাধিক বৈঠক করেছেন। সেখানে সর্বসম্মতভাবে একমত পোষণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এনিয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, পাঠ্যবই থেকে প্রাক্তন আওয়ামি লিগ সরকার ও শেখ হাসিনার ছবি বাদ দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অধ্যায় যুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা জারি রয়েছে। এ নিয়ে সকলেই একমত পোষণ করেছেন। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের রাবার বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাইদ। প্রাণ যায় তাঁর।
অধ্যাপক হাসানের কথায়, "আমরা ভালো মানসম্মত লেখা চাইছি। সেজন্য মন্ত্রকের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে। তবে অভ্যুত্থানের কিছু গ্রাফিতি ইতিমধ্যে বিভিন্ন বইয়ে স্থান পেয়েছে। কিছু বই ছাপানোর কাজ পেয়েছিল ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। সমালোচনা হওয়ায় তাদের বাদ দিয়ে দেশি ছাপাখানাগুলোকে বই ছাপার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনুসারে আগামী বছরের পাঠ্যবই পরিমার্জনে কাজ করছে এনসিটিবি। ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই ছাপার জন্য প্রেসে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য শ্রেণির বইও যাবে। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে সব বইয়ের কাজ সম্পন্ন হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, জানুয়ারি মাসেই শিক্ষার্থীদের হাতে পরিমার্জিত পাঠ্যবই পৌঁছানোর। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন বই দিতে বলা হয়েছে ছাপার কাজে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে।"
উল্লেখ্য, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় শিক্ষা মন্ত্রক। ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে ২০২৬ সাল থেকে তা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার আগে ২০২৫ সালে শিক্ষার্থীদের ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই পরিমার্জন করে দেওয়া হবে। প্রতি বছর স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক পর্যায়ের ১ কোটি ৮৯ লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য ২৩ কোটি কপি বই ছাপায় এনসিটিবি। তাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, মে-জুন মাসে বই প্রুফ রিডারদের দেখানোর কথা ছিল। তবে এবার সেপ্টেম্বরে বই সংশোধনের ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আগামী বছরের শুরুতে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও জানুয়ারি মাসেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এনসিটিবি আধিকারিকরা।