সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে বাংলাদেশে। ব্যাপক গণরোষে গদিচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে বাংলাদেশে অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। এবার নিজেদের অধিকারের দাবিতে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘির ময়দানে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি রেখেছেন তাঁরা।
গত ৫ আগস্ট ব্যাপক গণ আন্দোলনের জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন হাসিনা। দেশে ছেড়ে তিনি আপাতত ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার পর থেকে বাংলাদেশে হামলার শিকার হন হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। বিশেষ করে হিন্দুদের উপর আক্রমণের খাঁড়া নেমে আসে। বহু হিন্দুমন্দির ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ভারতও। এবার ইউনুস সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবি রেখেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ’। শুক্রবার তাদের ডাকে চট্টগ্রামের লালদিঘির ময়দানে সমাবেশে ডাক দেন হাজার হাজার হিন্দু। নিজেদের অধিকারের দাবিতে সরব হন তাঁরা।
ইউনুস সরকারের কাছে যে ৮টি দাবি জানানো হয়েছে সেগুলো হল-
১। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন।
২। ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
৩। সময় অপচয় না করে দ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
৪। আলাদাভাবে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক গঠন।
৫। সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ।
৬। প্রতিটি হস্টেলে প্রার্থনার জন্য আলাদা কক্ষ।
৭। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ডের আধুনিকীকরণ।
৮। দুর্গাপুজোয় ৫ দিন ছুটি।
এছাড়াও এদিন সমাবেশের মঞ্চ থেকে ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ এর মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেন, "কেউ যদি আমাদের এদেশ থেকে উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন তাহলে এ ভূমি সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। এদেশ আফগানিস্তান, সিরিয়া হবে। কোনও গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। আমরা আর চুপ থাকব না। অধিকারের জন্য মাঠে নেমেছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত সনাতনী ভূমিপুত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, মৃত্যু হলেও রাজপথ ত্যাগ করব না। আমরা সংখ্যালঘু বলে আন্তর্জাতিক সনদ হিসেবে অধিকার দেওয়ার ভয়ে আমাদের বাংলাদেশি পরিচয় প্রদান করতে চাইবেন। কিন্তু আমাদের নৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন এ প্রহসন আমরা আর মানব না।" এই সমাবেশের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনও।
উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসেই হামলার প্রতিবাদে ঢাকার রাস্তায় নামেন হাজার হাজার হিন্দু। বিক্ষোভ হয় চিটাগংয়ের একাধিক জায়গায়। সেসময় হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস বলেছিলেন, "সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা খুবই জঘন্য কাজ। যাঁদের উপর হামলা হচ্ছে তাঁরা কি এদেশের মানুষ নয়? আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা যখন দেশকে বাঁচাতে পেরেছেন তখন কিছু পরিবারকে বাঁচাতে পারবেন না? আপনাদেরকেই গলা তুলে বলতে হবে যাতে এই মানুষগুলো কেউ ক্ষতি করতে না পারে। তাঁরা সকলে আমার ভাই। আমরা একসাথে লড়াই করেছি, আমরা একসঙ্গেই থাকব।” কিন্তু তার পরেও দুর্গাপুজোর সময় নানা মন্দির ও পুজো কমিটিগুলোকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের হিন্দুদের পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে ভারত,আমেরিকার মতো দেশ।