তরুণকান্তি দাস: একা রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসর। এক ও দু’টাকার খুচরোর চাপ সামলানো যাচ্ছে না। এবার খাঁড়া পঞ্চাশ পয়সার। বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকদের চাপ বাড়ছিল। যা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাংকও ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল। এবার বেশ কিছু ব্যাংকের শাখায় নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, গ্রাহকদের কাছ থেকে পঞ্চাশ পয়সাও ফিরিয়ে নেবে তারা। তবে রিজার্ভ ব্যাংকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এখনই আট আনা বা আধুলিকে ব্রাত্য করে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। বাজারে লেনদেন তেমন হচ্ছে না। অর্থাৎ এর তেমন বাজারমূল্য নেই বলেই আপাতত ব্যাংকগুলি জমা নেবে। যেমন নেওয়া হয় এক, দু’টাকা বা পাঁচ টাকার মুদ্রা।
কথায় আছে, আমদানি আট আনা খরচা দো রুপাইয়া। আক্ষরিক অর্থে আধুলি বানানোর ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংকের অর্থনীতিতে এটা খেটে যায়। পঞ্চাশ পয়সা বানাতে খরচ হয় এর বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি। কোনও নোটে যেমন রিজার্ভ ব্যাংকের বিনিময় মূল্যের নিশ্চয়তা সূচক বিজ্ঞপ্তি থাকে, মুদ্রার ক্ষেত্রে তা থাকে না। মুদ্রার ধাতব মূল্য এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যা বাজারের ওঠাপড়ার উপর নির্ভরশীল। তাই ২০১১ সালে রিজার্ভ ব্যাংক যখন ২৫ পয়সা বন্ধ করে, তখন তার লেনদেনের তেমন মূল্য যেমন ছিল না, তেমনই উৎপাদনের খরচও ছিল অনেক বেশি। এখন ৫০ পয়সার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতিটা একইরকম।
এ ক্ষেত্রে প্রথম ধাক্কাটা আসে লজেন্স শিল্প থেকে। যেখানে ৫০ পয়সার গুরুত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তারা যখন ন্যূনতম দাম এক টাকা করে দেয় তখনই বাজারে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ক্রমশ বাজার থেকে সরে যায় আধুলি। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাংকের হিসাবে মানুষের হাতে অনেক খুচরো পঞ্চাশ পয়সা থেকে গিয়েছে। যা ফেরানো দরকার। তাই ব্যাংকগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, গ্রাহকরা চাইলে তাঁদের কাছ থেকে যেন আধুলি ফেরত নেওয়া হয়। এমনিতে খুচরোর ব্যাপক জোগানের সময় ব্যাংকগুলির উপর চাপ তৈরি হয়েছিল। বহু শাখায় গন্ডগোল হয়েছে। কর্মীরা নিগৃহীত হয়েছেন খুচরো নিতে না চাওয়ায়। আবার দেখা গিয়েছে, একের পর এক ব্যাংকে বস্তাবন্দি করে রাখতে হয়েছে খুচরো। খুচরো-জট কাটিয়ে ওঠার পর এবার ফের নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়িত করার জন্য ব্যাংকগুলিকে সিঁড়ি করা হচ্ছে। নোটিস বলছে, পঞ্চাশ পয়সা থেকে শুরু করে যে কোনও মুদ্রা ফেরত নেওয়া হবে। বেশ কিছু ব্যাংকে বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর? কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে যে তথ্য মিলেছে তা বেশ মজার। একজন গ্রাহকও পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে আসেননি। আসলে আট আনা একেবারেই গুরুত্ব হারিয়েছে বলে অভিমত ব্যাংকিং শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের। তবে খুচরো ফেরতের নিয়ম হল, তা প্যাকেটবন্দি করে কমপক্ষে একশো টাকার মূল্যে দিতে হবে। অর্থাৎ, এক টাকা হলে কম করে ১০০টা জমা দেওয়া চাই।
[আরও পড়ুন: ACP’র গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম হায়দরাবাদ গণধর্ষণে অভিযুক্তের বাবা, ভরতি হাসপাতালে]
কিন্তু আধুলির জন্য এত উদ্বেগ কেন রিজার্ভ ব্যাংকের? এটা কি পঁচিশ পয়সার পথে আধুলিকে পাঠানোর প্রথম ধাপ? ইন্ডিয়ান ব্যাংকিং অ্যসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় নেতা রাজেন নাগর বলেছেন, “এখনই হয়তো বাতিল হবে না। এমন নির্দেশ সহজে দেবে না রিজার্ভ ব্যাংক। এই ধরনের সিদ্ধান্ত অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে। এখন অবস্থা এই পদক্ষেপের মতো নয়। তবে ব্যাংকগুলিকে পঞ্চাশ পয়সাও নিতে বলা যথেষ্ট অর্থবহ।” ব্যাংক অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা সঞ্জয় দাসের অভিমত, “আসলে অনেক ব্যাংক ৫০ পয়সা ফেরত নিচ্ছিল না। তাই এই বিজ্ঞপ্তি। কারণ আধুলি তো এখনও আমাদের কাছে সচল পয়সা।” অন্ধ্র ব্যাংকের অফিসার্স সংগঠনের নেতা অরিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য এমন নির্দেশের কথা জানা নেই বলেছেন। তবে তিনি বলেন, “আমরা অন্যান্য মুদ্রা নিচ্ছি। তা রিজার্ভ ব্যাংকের নির্দেশই।”
The post ৫০ পয়সার কয়েন অবহেলায় ফেলে রেখেছেন? ব্যাংকে জমা দিলেই হতে পারে লক্ষ্মীলাভ appeared first on Sangbad Pratidin.