টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: দশম শ্রেণিতে আড়াই মাস পড়ার পর এক পড়ুয়াকে ফের নবম শ্রেণিতে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলের এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে। ছাত্রীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষিকার চাহিদামতো টাকা না দিতে না পারায় এই ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মহকুমা শাসক ও বিষ্ণুপুর থানার দ্বারস্থ হয়েছে ওই ছাত্রী ও তার পরিবার। ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন ও শিক্ষাদপ্তর। যদিও টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা কুন্ডু। তাঁর দাবি, ক্লারিক্যাল ভুলে ওই ছাত্রীকে দশম শ্রেণিতে ভরতি করা হয়েছিল পোর্টালে। সেই ভুল সংশোধন করে ফের তাকে নবম শ্রেণিতে ভরতি করা হয়েছে। প্রশ্ন হল সেই ভুল সংশোধনে এতদিন কেন সময় লাগল?
জানা গিয়েছে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলে নবম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় অয়ন্তিকা পাত্র নামের এক ছাত্রী। দশম শ্রেণিতে ভরতির যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পর স্কুলের তরফে তাকে বইপত্রও দিয়ে দেওয়া হয়। আড়াই মাস পর সম্প্রতি ওই ছাত্রীকে জানানো হয়, দশম শ্রেণিতে নয়, তাকে পুনরায় নবম শ্রেণিতে পড়তে হবে। ছাত্রীর অভিযোগ, শারিরীক অসুস্থতার কারণে সে নবম শ্রেণিতে সেভাবে ক্লাস করতে ও সেমেস্টারের পরীক্ষা দিতে পারেনি। তারপর ছাত্রীর পরিবারের অনুরোধে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে তাকে দশম শ্রেণিতে ভরতি করে নেওয়া হয়। ছাত্রীর অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তার পরিবারের কাছে একটি সংস্থার নামে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: শিয়ালদহ থেকে বিদায় নিচ্ছে টিনের শেড, ছাদজুড়ে তৈরি হচ্ছে ‘রুফ প্লাজা’]
অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে প্রধান শিক্ষিকার দাবিমতো টাকা ছাত্রীর পরিবার দিতে রাজি হলে তাকে দশম শ্রেণিতে ভরতির ব্যবস্থা করে দেন প্রধান শিক্ষিকা। পরে পরিবার ওই টাকা না দেওয়াতেই আড়াই মাস পর ফের তাকে নবম শ্রেণিতে নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষিকা। তবে টাকা চাওয়ার কথা স্বীকার করেনি। তাঁর দাবি, স্কুলের ১১ জন ছাত্রীর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে সেই ছাত্রীরা কারা সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
এদিকে ওই ছাত্রী বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে স্থানীয় বিষ্ণুপুর থানা ও মহকুমা শাসকের কাছে। মধুমিতাদেবীর দাবি, “শিক্ষা পোর্টালে ভুল তথ্য আপলোড হয়ে যাওয়াতেই সমস্যা হয়েছিল। ওই ছাত্রী ক্লাস না করায় ও সেমেস্টারের পরীক্ষা না দেওয়ায় স্টাফ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে নবম শ্রেণিতে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে স্কুল শিক্ষাদপ্তর ও মহকুমা প্রশাসন। ঘটনার তদন্তের দাবি করেছেন ওই ছাত্রীর মা সুচন্দা পাত্র। তিনি বলেন,”শিক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা চলছে। উপযুক্ত শাস্তি চাই এই দিদিমণির।” এ ব্যাপারে বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক অনুপকুমার দত্ত বলেছেন, “এক ছাত্রী অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে নাকি ক্লাস টেন থেকে ক্লাস নাইনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”