মলয় কুণ্ডু: বাংলার ছেলে জয় করেছিলেন গোটা বিশ্ব। তাঁর সৃষ্ট সুরে এখনও বুঁদ আট থেকে আশি। সেই ‘ডিস্কো কিং’ বাপি লাহিড়ীর (Bappi Lahiri) মৃত্যর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি সংগীত প্রেমী। প্রিয় বাপিদাকে হারিয়ে বলিউডে গভীর শূন্যতা। শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি তাঁর পরিবারও। সেই চাপা দুঃখ নিয়েই মুম্বই থেকে বাপি লাহিড়ীর অস্থি ভাসাতে কলকাতায় আসছেন লাহিড়ী পরিবার। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই আউট্রাম ঘাটে পৌঁছে গঙ্গায় সুরকারের অস্থি ভাসাবেন তাঁর দুই সন্তান।
কলকাতার গঙ্গাতেই ভাসানো হয়েছিল বাপি লাহিড়ীর বাবা সংগীতশিল্পী অপরেশ লাহিড়ীর অস্থি। পরিবারের ইচ্ছে তাই ছেলে বাপিরও অস্থি বিসর্জন হোক এই শহরেই। এই গঙ্গায়। নবান্ন সূত্রে খবর, বাবার মতোই যাতে বাপি লাহিড়ীর অস্থি এখানেই বিসর্জিত হয়, তার জন্য পরিবারের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সেই মতোই সব ধরনের সহযোগিতা লাহিড়ী পরিবারকে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
বাপি লাহিড়ীর ছেলে বাপ্পা লাহিড়ীও সংগীত জগতের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর মেয়ে রিমা লাহিড়ীও এক সময় গান গাইতেন। সুরকারের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা বাপি লাহিড়ীর সৃষ্টিকে আঁকড়ে ধরেই শিল্পীকে অমর করে রাখতে চান। ঠিক যেমনটি চান তাঁর অনুরাগীরাও।
[আরও পড়ুন: একেনবাবুর ‘দ্য একেন’ থেকে ফেলুদার ‘হত্যাপুরী’, ঘোষিত আটটি বাংলা ছবির মুক্তির তারিখ]
১৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি শিল্পী বাপি লাহিড়ী। একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। OSA তথা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিতে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
গত শতকের আটের দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের জগতে পপ-ডিস্কো গানের যে জোয়ার এসেছিল তাঁর অন্যতম পুরোধা ছিলেন বাপি। ‘ডিস্কো ডান্সার’ (১৯৮২), ‘ডান্স ডান্স’ (১৯৮৭) হয়ে একের পর এক ছবিতে করা তাঁর সুর সেই সময়ের তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলিত করেছিল। সেই সময়ের এক প্রতিনিধি হিসেবে বাপি লাহিড়ীর অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে হবে। সংগীতের সমসাময়িকতা যে তাঁর নাড়ির স্পন্দনে তা নতুন করে প্রমাণিত হয়েছিল ২০১১ সালে ‘ডার্টি পিকচার’ ছবিতে ‘উ লা লা’ গানের মধ্যে দিয়ে। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বুঁদ করে রাখার কোন জাদুক্ষমতায় বলীয়ান তিনি। তবে কেবল পপ বা ডিস্কো নয়, নরম রোম্যান্টিক গানেও যে তিনি অনন্য তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল কেরিয়ারের শুরুতে ‘চলতে চলতে’ (১৯৭৬) ছবিতে বাপির করা সুর থেকেই।
একেবারে ছোটবেলা থেকেই সাংগীতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা। বাবা ও মা দু’জনেই ছিলেন সংগীত জগতের মানুষ। ৩ বছর বয়সে তবলা বাদক হিসেবে কেরিয়ার শুরু। ২০২০ সালে ‘বাগী ৩’ ছবিতে ‘ভাঙ্কাস’ গানটিই ছিল তাঁর শেষ কাজ। মাঝের দীর্ঘ সময়ে সুরকার তো বটেই, কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও যে অবদান তিনি রেখে গেলেন তা অবিস্মরণীয়।