কোয়েল মুখোপাধ্যায়: দিন কয়েক ধরেই অসম্ভব ক্লান্তিতে ভুগছেন নাকি? রক্তের প্লেটলেটস একবার পরীক্ষা করে দেখুন তো! যদি হঠাৎ করেই অনেকটা কমে যায়, তো সাবধান। আপনি কোভিড আক্রান্তও (COVID Positive) হতে পারেন। কারণ, প্রচণ্ড ক্লান্তি আর এক ধাক্কায় প্লেটলেটস অনেকটা নিচে নেমে যাওয়াও কিন্তু কোভিড সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে বলে দাবি চিকিৎসকদের। আর ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ঘটনায় এর প্রমাণও মিলেছে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।
এতদিন ধরে শুধুই জ্বর, সর্দিকাশি, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া প্রভৃতিকেই কোভিড সংক্রমণের উপসর্গ বলে ধরে নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় এর অন্য দিকটিও দেখা গিয়েছে। লখনউয়ের আজাদ নগর পাড়া রোডের বাসিন্দা, আলিম শেখ (৬০) অসম্ভব ক্লান্তি অনুভব করায়, ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করান। তখন দেখা যায়, তার প্লেটলেট কাউন্ট এক ধাক্কায় কমে ৮৫,০০০-য় নেমে এসেছে, সাধারণত যা থাকার কথা ১.৫-৪.৫ লক্ষ। তিনি ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে শুরু করেন। কিন্তু গত ২৩ এপ্রিল, তাঁর তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ফের রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায়, প্লেটলেট কাউন্ট আরও কমে ২০,০০০-এ নেমে এসেছে। তখন পরিবার তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করতে যায় কিন্তু ব্যর্থ হয় কারণ অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতাল ভরতি নেয়নি। চিকিৎসার অভাবে অচিরেই তাঁর মৃত্যু হয়।
[আরও পড়ুন: বারবার স্যানিটাইজার-সাবানের ব্যবহারে রুক্ষ হাত, কীভাবে কোমলতা ফেরাবেন?]
একইরকমভাবে, বালিগঞ্জের বাসিন্দা রাজকুমার রাস্তোগি (৫৯) গত ১৩ এপ্রিল অসম্ভব ক্লান্তি অনুভব করায় ডাক্তারের কথামতো রক্তপরীক্ষা করান। দেখা যায়, প্লেটলেট কাউন্ট কমে ২১,০০০-য় পৌঁছেছে। ওষুধে কিছুটা অবস্থার উন্নতি হয় কিন্তু ১৬ এপ্রিল তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তখন পরীক্ষা করে জানা যায়, রাজকুমার কোভিড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ায় দিন কয়েক পরে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু তাঁর ছেলের দাবি, “বাবার জ্বরও হয়নি, কাশিও হয়নি। এমনকী প্রথম দিকে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ছিল না, যে লক্ষণগুলিকে আমরা কোভিডের লক্ষণ বলেই জানি।”
এই বিষয়ে অধ্যাপক সন্তোষ কুমারের মত, “প্রতিটি ভাইরাল সংক্রমণে প্লেটলেট কাউন্ট কমে আসে। তাই কারও ক্লান্তি অনুভব হলে বা হঠাৎ প্লেটলেট কাউন্ট কমে গেলে, তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। বরং কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।”
[আরও পড়ুন: দূরত্ববিধি না মানলে একজন করোনা আক্রান্ত করতে পারেন ৪০৬ জনকে! বিস্ফোরক দাবি কেন্দ্রের]
আবার রাম মনোহর লোহিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসের মেডিসিন বিভাগের ফ্যাকাল্টি, ডা. বিক্রম সিংয়ের কথায়, “তীব্র ক্লান্তি, অস্থিরতা ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ। আর যেহেতু কোভিডও ভাইরাল সংক্রমণ, তাই এগুলো কোভিডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাধারণ অবস্থায় প্লেটলেট কাউন্ট, প্রতি লিটার রক্তে ১.৫ লক্ষ থেকে ৪.৫ লক্ষ হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর হঠাৎ পতন দেখা যায়। তখনই সতর্ক হওয়া উচিত। আমাদের পরামর্শ, হঠাৎ করেই খুব ক্লান্ত আর ধকলগ্রস্ত মনে হলে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নিন।”