স্টাফ রিপোর্টার: একুশের বিধানসভা ভোটের পর একের পর এক উপনির্বাচনে তৃতীয় স্থানে শেষ করছে বিজেপি (BJP)। তার শেষ উদাহরণ সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। বঙ্গ বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন শিবিরের ব্যর্থতার বহর ক্রমশই বাড়ছে। কেন বিজেপি ক্রমশ তৃতীয় স্থানে চলে যাচ্ছে? তা নিয়ে এবার দলের অন্দরে প্রশ্ন তুললেন বঙ্গ বিজেপির আদি নেতারা। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর দিকে নিশানা করেছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, বর্তমান রাজ্য বিজেপি নেতাদের রাজনৈতিক বিচক্ষণতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদি বিজেপির ওই অংশ। একই সঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দক্ষতা নিয়েও এবার চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে।
আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচন থেকে শুরু করে বালিগঞ্জ, ভবানীপুর এবং সবশেষ সাগরদিঘিতে নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, সাগরদিঘিতে তো প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে সবটাই শুভেন্দু করেছিলেন। তাহলে এই অবস্থা হল কেন? শুভেন্দুর নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন রাজ্যনেতা। দলের একাংশ মনে করছে, যেখানে শক্তি নেই, সেখানে ভাল ফল করা যাবে না, তাই গোপনে বাম-কংগ্রেসকে সাহায্য করার যে কৌশল নেওয়া হয়েছে, তা ভবিষ্যতে দলের কাছে বুমেরাং হতে চলেছে। তৃণমূল বিরোধী ভোট মানুষ তো তা হলে বিজেপিকে দেবেই না, বাম-কংগ্রেসকেই দেবে। তৃণমূলকে আটকাতে বাম—কংগ্রেসের হাত শক্ত করতে গিয়ে নিজেদেরই নাক কাটছে বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির।
[আরও পড়ুন: সিপিএমের বৈঠকে হাজির বিজেপি নেতা, রাম-বাম ‘আঁতাঁতে’ তুঙ্গে বিতর্ক]
সাগরদিঘির ফলাফলের পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্যেই এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সুকান্ত বলেছেন, ‘‘কিছু ‘ফ্লোটিং’ ভোট, যঁারা আমাদের ভোটার তঁাদের ভোট গিয়েছে কংগ্রেসে। তঁারা ভেবেছেন কংগ্রেস জিততে পারবে তাই সেই দিকে গিয়েছে।’’ সূত্রের খবর, বঙ্গ বিজেপি ইতিমধ্যেই গোপন স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে যে, নিজেদের লড়াই দেওয়ার ক্ষমতা যেখানে নেই, সেখানে তৃণমূলকে আটকাতে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস বা বাম প্রার্থীকেও গোপনে সমর্থনের পথে হাঁটবে দল। আসন্ন গ্রামীণ ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণ গেরুয়া শিবির পঞ্চায়েত প্রস্তুতি বৈঠকে এমনই পরিকল্পনা করে এগোতে চাইছে।
বিজেপি নেতারা বারবার অভিযোগ করেন যে, তৃণমূলকে সাহায্য করছে সিপিএম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে (TMC) আটকাতে নিচুতলায় বাম আর রামের অলিখিত জোট হতে চলেছে বহু জায়গায়। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষনেতা এই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে এদিন বলেন, “যেখানে প্রার্থী দেওয়ার শক্তি নেই সেখানে বাম-কংগ্রেসকে সমর্থনেও অরুচি নেই আমাদের।” গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যে এসে সাংগঠনিক বৈঠকে দলের নেতাদের প্রশ্ন করছেন, কেন রামের ভোট আবার বামে চলে যাচ্ছে? অথচ বাংলায় তৃণমূলকে আটকাতে নিজেদের দুর্বল জায়গায় বাম-কংগ্রেসকে সমর্থনের পথে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। সদ্য সাগরদিঘির ভোটের ফলাফলেই তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ফলে বঙ্গ বিজেপির এই কৌশল দলের নীতি-আদর্শের বিরোধী বলে মনে করছেন আদি বিজেপি নেতারা।