সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জাতীয় ভোটার দিবস, বি আর আম্বেদকরকে স্মরণের দিন। কিন্তু এই দিনেও বাংলায় প্রশাসনিক বনাম সাংবিধানিক বিবাদ তুঙ্গে উঠল। মঙ্গলবার বিধানসভা চত্বরে এসে আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদানের পর সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে (Jagdeep Dhankhar) রীতিমতো রণং দেহি ভূমিকায় দেখা গেল। ধনকড়ের ভূমিকায় ‘স্তম্ভিত’ বিধানসভার স্পিকার। রাজ্যপালের আচরণ ‘অসৌজন্যমূলক’ বলে প্রতিক্রিয়া তাঁর।
বৈঠক শুরুর আগেই অবশ্য সাংবাদিকদের সমাগমে মেজাজ হারিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন রাজ্যপাল। তারপর ফিরে বক্তব্য শুরু করেন। একেকটি বিষয় উত্থাপন করে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরেন, অভিযোগ করেন তিনি। নিজের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন। রাজ্য সরকারের অসহযোগিতা, এড়িয়ে যাওয়া মনোভাব নিয়ে তীব্র আক্রমণ শানান ধনকড়। মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata Banerjee) নাম নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ”রাজ্যপালের কাছে দায়বদ্ধ মুখ্যমন্ত্রী, উপেক্ষা করে চলেছেন কেন? উনি জানেন না, রাজ্যপালের সাংবিধানিক এক্তিয়ার কতটা। তাঁর কোনও ধারণা নেই।” রাজ্যপালের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল সৌজন্যমূলক আচরণ করেননি, এমনটা না করলেই ভাল হত, এমনই মত স্পিকারের।
[আরও পড়ুন: মসুর ডালে মেশানো সর্বনাশা পাউডার! ভেজাল কারবার চালানোয় ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করল EB]
মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ বিধানসভা ভবনে পৌঁছন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাঁকে স্বাগত জানিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে যান আম্বেদকরের মূর্তির কাছে। মূর্তিতে ফুল, মালা দেন রাজ্যপাল। এরপর তাঁর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল। সেখানেই একের পর এক বাণে রাজ্য সরকারকে বিদ্ধ করেন তিনি। বিস্ফোরক অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, ”রাজ্যপাল হিসেবে আমি শঙ্কিত। এ রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। এখানে আইনের শাসন নয়, শাসকের আইন চলছে। ভোটাররা ভয় পান।” এরপর স্পিকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, ”আমি তথ্য চাইলে দেওয়া হয় না। একাধিক বিষয় নিয়ে রাজ্যপালকে তথ্য দেওয়ার কথা, কিন্তু আমি কিছুই পাই না। সরকারি আধিকারিকদের ডেকে পাঠালে তাঁরা উপেক্ষা করেন। আমলাতন্ত্র রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েছে, যা কাম্য নয়।”
[আরও পড়ুন: ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের নাম করে পর্ন ভিডিও শুট! নিউটাউনের ঘটনায় অভিযোগ ২ যুবকের]
এরপর আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন ধনকড়। তাঁর দাবি, ”কোনও বিল সই করা বাকি নেই। রাজভবনের নামে যা বলা হচ্ছে, সব ভুল। আমার কাছে যা বিল আসে, সই করে দিই।” এরপরই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, হাওড়া পুরবিলও কি সই করা হয়েছে? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান রাজ্যপাল।
রাজ্যপালের বক্তব্যের পরই আসরে নামেন স্পিকার। তিনিও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ”রাজ্যপাল যে যে তথ্য দিলেন, তা ঠিক নয়। এখনও বেশ কিছু বিল রাজভবনে পড়ে আছে, সই হয়নি। উনি সাংবিধানিক এক্তিয়ারের কথা বলছেন, আমরাও আমাদের সাংবিধানিক এক্তিয়ার মেনেই কাজ করি। আমি ওঁর কথা শুনে স্তম্ভিত। রাজ্যপালের পক্ষে এই আচরণ একেবারেই সৌজন্যমূলক নয়।” এদিনের ঘটনায় রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত যে আরও চরমে উঠল, তা বলাই বাহুল্য।