দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: দেবী পক্ষের আগেই আমেরিকায় বিশ্ব পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে নারী শক্তির উত্থান ঘটিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেন উত্তরপাড়ার মেয়ে শম্পা গুহ৷ সম্প্রতি, আমেরিকায় ১০০ কেজি বিভাগে সোনা জেতেন শম্পা৷ মার্কিনমুলুকে বিশ্বজয়ের পর দিল্লি হয়ে রবিবার সকালে উত্তরপাড়ার চৌধুরী পাড়ার বাড়িতে ফেরেন শম্পা। তিনি মহিলা পুলিশ পরিচালিত নবগঠিত বাহিনীর ‘উইনার্স’ টিমের পদস্থ আধিকারিক৷ রবিবার বাড়ি ফিরতেই কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন বিশ্বজয়ী৷ সামনেই দুর্গাপুজো। কলকাতায় মেয়েদের নিরাপত্তায় গুরুদায়িত্ব রয়েছে তাঁর উপর। তাই বিশ্রাম নেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই৷ তাঁকে তো স্বয়ং নারীশক্তির প্রতিরূপ হয়ে পুজোর কটা দিন কলকাতায় মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের রক্ষা করতে হবে৷
[কচুরিপানা সাফাইয়ে কীটনাশক স্প্রে, কৃষ্ণসায়রে মাছের মড়ক]
শম্পা এতবড় সাফল্যের পর বাড়ি ফিরেও কোনও উচ্ছ্বাস দেখাননি৷ বরং পরবর্তী লক্ষ্যে অবিচল৷ ছোটবেলা থেকেই পুতুল খেলার থেকে ছেলেদের খেলা বেশি পছন্দ ছিল শম্পার। তাই কখনও ডাংগুলি, কখনও ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে মেতে থাকতেন৷ শম্পা জানান, অনেক সময় ছেলেরা তাঁকে খেলায় নিতে চাইত না৷ কিন্তু তাঁর বাবা কোনওদিন তাঁকে তাঁর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি। তিনি নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ করেননি।
[ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার ভিনরাজ্যের যুবকের দেহ, চাঞ্চল্য মধ্যমগ্রামে]
উত্তরপাড়া কলেজে পড়াকালীনই ১৯৯৭ সালে কলকাতা পুলিশে চাকরিতে যোগ দেন। শম্পা জানান, প্রথমে সে অ্যাথলেটিক্সে উত্তরপাড়ার মদন দাসের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। মদনবাবুই তাঁকে কলকাতায় সুব্রত দেবনাথের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যান। শর্টপটে ট্রেনিং নেওয়ার সময়ই তাঁকে ওয়েট ট্রেনিংয়ের জন্য অশোক সেনগুপ্তর কাছে পাঠানো হয়। সেখানেই অশোকবাবু উপলব্ধি করেন, পাওয়ার লিফটিং করলে মেয়েটা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। তারপরই পাওয়ার লিফটিংয়ের জগতে প্রবেশ। ইতিমধ্যেই ছ’বার এশিয়ান পাওয়ার লিফটিং ও তিন বার কমনওয়েলথ গেমস পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়ন৷ ২০০৫-এ কমনওয়েলথে পাওয়ার লিফটিং পাঁচ পাঁচটি সোনা জিতে লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে সে স্থান করে নিয়েছে। ২০১৬-১৭ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বাংলার গৌরব সম্মানে ভূষিত করেছেন। শম্পা রেল, সিআরপিএফ থেকে অনেক ভালো চাকরির অফার পাওয়া সত্ত্বেও কলকাতা পুলিশের চাকরিই বেছে নেন। এক সময় যখন ৯৭-তে ছেলেরা বুলেট মোটরবাইক চালাতে ভয় পেতন, তখন কিশোরী শম্পা উত্তরপাড়ার বুকে বুলেট চালিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছিল মেয়েরা ইচ্ছে করলে অনেক দূর যেতে পারে। পাশাপাশি কেরিয়ারের জন্য রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র চাকরি করতে যাবে এটা ভাবতেই পারেন না শম্পা। তাঁর কথায়, তাঁরা দুই বোন। বাবা-মা তাঁদের কষ্ট করে বড় করেছেন। তাঁরা যদি দূরে চলে যায় তাহলে বাবা মাকে কে দেখবে? তাই বাংলা ছেড়ে কোনওদিনই অন্য রাজ্যে চাকরির জন্য সে যাবে না৷
The post বঙ্গতনয়ার বিশ্বজয়, মার্কিন মুলুকে পাওয়ার লিফটিংয়ে সোনা হুগলির শম্পার appeared first on Sangbad Pratidin.