অভিরুপ দাস: বেরোচ্ছে তো বেরোচ্ছেই। থামার নাম নেই। কলের জল নয়, পিত্তথলির পাথর। একটা দুটো নয়। একশো-দেড়শোও নয়। দুশোর উপর পাথর বেরোল একত্রিশ বছরের তাপসী দাসের পিত্তথলি থেকে। ডানকুনির বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন পেটের ব্যথায়। ফ্যাট জাতীয় খাবার খেলেই ব্যথা বাড়ত। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে পিত্তথলির পাথর (Gallbladder Stone) । কে জানত তা সংখ্যায় এত!
কয়েকদিন আগে হিন্দ মোটরের (Hind Motor) বেসরকারি নার্সিংহোমে এসেছিলেন ডাক্তার দেখাতে। ডা. দেবাশিস সরকার জানিয়েছেন, ওই মহিলার গলব্লাডারে প্রদাহ ছিল। ঠিক করি ওষুধ দিয়ে কিছুটা কমিয়ে তারপর অস্ত্রোপচার করব। সেইমতো শুক্রবার অস্ত্রোপচারের তোড়জোড় শুরু হয়। অ্যানাস্থেটিস্টের দায়িত্বে ছিলেন ডা. শৌভিক সরকার। ল্যাপরোস্কোপিক অস্ত্রোপচার করতে গিয়েই চোখ কপালে তোলার জোগাড়। পেটের ভেতরের একাধিক অঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে পেঁচিয়ে গিয়েছে গলব্লাডার। কুচো, মাঝারি, বড় মিলিয়ে তাতে পাথর দুশোর উপর। এতগুলো পাথর স্বাভাবিক? ডা. দেবাশিস সরকারের কথায়, পাঁচ দশটা পাথর আকছার দেখা যায়। কিন্তু দুশোর উপর পাথর বিরল ব্যাপার।
[আরও পড়ুন: তাঁর কণ্ঠেই চন্দ্রযানের সফল অবতরণের সাক্ষী ছিল ভারত, প্রয়াত ইসরোর সেই বিজ্ঞানী]
ঘনঘন উপোস করা, অসময়ে খাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টরল গলব্লাডার স্টোনের অন্যতম কারণ। চিকিৎসকদের অনুমান এমন কারণেই পাথর হয়েছে তাপসীদেবীরও। যকৃতের নিচে ডানদিক ঘেঁষে থাকে পিত্তথলি। লিভার বা যকৃৎ দ্বারা উৎপাদিত অতিরিক্ত পিত্ত এই পিত্তথলিতে বা গলব্লাডারে এসে জমা হয়। গলব্লাডারে স্টোন হলে পেটের ডানদিকে অনুভূত হয় মারাত্মক ব্যথা।
ডা. দেবাশিস সরকারের কথায়, সাধারণত এক সেন্টিমিটার স্টোন তৈরি হতে একবছর সময় লাগে। এই মহিলার গলব্লাডারে যে আকারের পাথর ছিল তা তৈরি হতেও অনেকদিন লেগেছে। কিন্তু প্রথমটায় কিছুই টের পাননি। ডা. শৌভিক সরকার জানিয়েছেন, পাথরের অবস্থানই এর অন্যতম কারণ। অনেকের পাথর এমন গলব্লাডারের ‘নেক’ অংশে থাকে। সেক্ষেত্রে অত্যন্ত ছোট আকারের হলেও উপসর্গ দেখা যায়। অনেক রোগী প্রথমটায় কিছু বুঝতেই পারেন না। পেটের মধ্যে যে দুশোর উপর পাথর তা টের পাননি তাপসী দেবীও।