শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: দীর্ঘ পারিবারিক অশান্তির জের। বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা মা, দুই মেয়ের। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের ৩ জন বাসিন্দা এখন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভরতি। এঁদের মধ্যে বড় মেয়ের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।মায়ের অবস্থাও উদ্বেগজনক। কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে ছোট মেয়ে। নবম শ্রেণির এই ছাত্রীই পুলিশকে সব জানিয়েছে।
[নিহত ৯ শ্রমিকের পরিবারের পাশে রাজ্য, দু’লক্ষ টাকা করে সাহায্য ঘোষণা]
রায়গঞ্জ পুরসভার ২২ নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা খোকন সেন পেশায় ঠিকাদার। বাড়ি রয়েছেন স্ত্রী সান্ত্বনা এবং দুই মেয়ে। বড় মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী, ছোট মেয়েটি পড়ে নবম শ্রেণিতে। পরিবার সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরে রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে ফিরে স্ত্রী ও দুই মেয়ের উপর অত্যাচার চালাতেন খোকন সেন। তাঁকে বারবার বুঝিয়ে সুস্থ জীবনে ফেরানোর চেষ্টা করলেও সফল হননি বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। একটা সময়ে অশান্তি এতটাই চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যে স্ত্রী এবং দুই মেয়ের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। এই মানুষের সঙ্গে আর থাকা যাবে না – এমনটা মনে করে তাঁরা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশ জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সান্ত্বনা দেবী শুক্রবার বাজারে গিয়ে বিষ কিনে আনেন। শনিবার সন্ধেবেলা তিনজনই একসঙ্গে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অচৈতন্য অবস্থায় ঘরের ভিতর পড়ে ছিলেন মা ও দুই মেয়ে। রাতে বাড়ি ফিরে খোকন সেন এই দৃশ্য দেখে তড়িঘড়ি তাঁদের উদ্ধার করে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আপাতত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তাঁর বড় মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী।
[ফের শিশুচোর সন্দেহে গণপিটুনি, নিগৃহীত মানসিক ভারসাম্যহীন]
কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে ছোট মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী। পুলিশ তাকেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। নাবালিকা মেয়েটি সবিস্তারে পুলিশকে জানিয়েছে বাবার অত্যাচারের কথা। খোকন সেন প্রথমদিকে শ্যামাপল্লি পূর্ব বিন্ধ্যগড় এলাকায় দুষ্কৃতী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। মেয়েরা কিছুটা বড় হওয়ার পর তিনি সেসব ছেড়ে ঠিকাদারের কাজ শুরু করেন। কিছুদিন সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু তারপর থেকেই দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিন রাতে বাবা মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। মায়ের উপর অত্যাচার করেন। বাদ পড়ে না দুই মেয়েও। পরিবার এবং প্রতিবেশীদের কাছে সমস্যার কথা খুলে বলেছিলেন সান্ত্বনা দেবী। তাঁরা সকলেই এই পরিবারের প্রতি সহমর্মী হয়ে খোকন সেনকে বোঝান। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি কিছুই। উলটে অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে তাঁর ছোট মেয়ে। নবম শ্রেণির এই ছাত্রী খুব ভাল আঁকে। স্কুলের নানা অনুষ্ঠানে তাঁর হাতের কাজ খুব প্রশংসিত। কিন্তু ছাত্রীটি জানিয়েছেন, বাড়িতে বাবার জন্য এত অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে সে কোনও কাজে মনোনিবেশ করতে পারছে না। তবে সংসারে আর্থিক অনটন নেই বলেও জানিয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্রী। আপাতত তার দাবি, বাবাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। সম্পূর্ণ সংশোধিত বাবা ফের সংসারে ফিরুন। স্থানীয় কাউন্সিলর তপন দাস ঘটনা শুনে খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি জানাচ্ছেন, এলাকার একটি পরিবার যে এতটা অশান্তির তিনি জানতেন না। তবে এরপর থেকে পরিবারের প্রতি নজর রাখবেন এবং অভিযুক্ত খোকন দাসের সঙ্গে আলাদাভাবে বসে বোঝানোর চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
The post বাড়িতে মদ্যপ কর্তার অত্যাচারে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা মা ও দুই মেয়ের appeared first on Sangbad Pratidin.
