সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর চিন্তাভাবনা যে বামমনস্ক বা বামপন্থা দ্বারা অনুপ্রাণিত সেটা এখন কমবেশি সকলের জানা। রাহুল ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন, সামাজিক ন্যায়ের কথা বলেন, সংখ্যালঘু, দলিতদের কথা বলেন। আসলে জন্ম থেকে তথাকথিত মধ্যপন্থার দল কংগ্রেসের পারিপার্শ্বিকে বড় হলেও রাহুলের রাজনৈতিক দর্শনের অনেকটাই তৈরি হয়েছে বিদেশের মাটিতে। তাঁর মৃদু বামপন্থী মতাদর্শের মূল ভিত্তি সেখানেই তৈরি। তবে, বিরোধী দলনেতার বামমনস্কতার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর মেন্টরদের প্রভাবও।
রাহুল ঘনিষ্ঠরা বলেন, সীতারাম ইয়েচুরি যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত বিরোধী দলনেতার মেন্টর কাম বন্ধু ছিলেন তিনিই। রাহুলের নীতি নির্ধারণ, ইস্যু ভিত্তিক অবস্থান ঠিক করা, কোন রাজ্যে কার সঙ্গে জোট করতে হবে, কোথায় কোথায় আদর্শগতভাবে আপস করা উচিত নয়, এসব নিয়েই বিরোধী দলনেতাকে পরামর্শ দিতেন তিনি। বস্তুত বঙ্গে সিপিএম এবং কংগ্রেসের জোটের নেপথ্যেও ইয়েচুরি-রাহুলের বন্ধুত্ব অনেকাংশে অনুঘটকের কাজ করেছে। ইয়েচুরির প্রয়াণের পর বঙ্গের সেই জোটও ভেঙে যায়।
বস্তুত, সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুতে বাম রাজনীতিতে যেমন শূন্যতা তৈরি করেছে, তেমন শূন্যতা তৈরি করেছিল রাহুলের ঘনিষ্ঠ মহলেও। সেই শূন্যতা বিরোধী দলনেতা পূরণ করেছেন এক বামপন্থী নেতাকে দিয়েই। তিনি সিপিআইএমএল(লিবারেশন) নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। শোনা যাচ্ছে, ইদানিং রাহুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে দীপঙ্করের। যা শুরু হয়েছিল বিহারের ভোটের সময়। রাহুলের ভোটার অধিকার যাত্রার সময় নিয়মিত তাঁর সঙ্গে থাকতেন লিবারেশন নেতা। বিহারে যখন বিরোধী শিবিরের আসনজোটের জন্য জোট ভেস্তে যেতে বসেছিল তখন দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের উদ্যোগেই জট কাটাতে উদ্যোগী হন রাহুল-সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা। শোনা যাচ্ছে, বিহার ভোটের সময় এবং তারপরও নিয়মিত দুই নেতার যোগাযোগ রয়েছে। ইয়াচুরির শূন্যস্থান অনেকটাই পূর্ণ করেছেন দীপঙ্কর।
দীপঙ্করের চিন্তাভাবনা ইয়েচুরির চেয়ে অনেকাংশে আলাদা। তিনি আদর্শগতভাবে সিপিএমের সঙ্গে অনেকাংশে আলাদা। সিপিএমের যেমন তৃণমূল, বা 'দুর্নীতিগস্ত' দলগুলির প্রতি উচাটন রয়েছে, সেটা তাঁর মধ্যে নেই। বিজেপি এবং আরএসএসকে তিনি ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসাবেই দেখেন। এবং সেই ফ্যাসিস্টদের রুখে দিতে যে কোনও শক্তির সঙ্গে আপস করতে তাঁর আপত্তি নেই। রাহুলের চিন্তাভাবনাতেও ইদানিং সেইসব ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায়। রাহুলও কোনওভাবেই আপস করতে চান না নীতিগতভাবে। বিজেপি-আরএসএসকে ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসাবে দেখেন। ইদানিং সামাজিক ন্যায় নিয়ে রাহুল বেশি সরব। জাতিগত জনগণনা নিয়ে সরব। বস্তুত উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই, অনেকটা বামেদের শ্রেণিসংগ্রামের মতোই। সংঘের আদর্শ বিরোধিতাই ইদানিং তাঁর রাজনীতির ইউএসপি। এর অনেকটাই দীপঙ্করের প্রভাব বলে মনে করে রাহুলের ঘনিষ্ঠ মহল। বাংলাতে সিপিএম থেকে দূরে সরে গিয়ে একলা চলার সিদ্ধান্ত যে কংগ্রেস নিয়েছে, সেটার নেপথ্যেও থাকতে পারে দীপঙ্করের প্রভাব। অর্থাৎ, বাংলার এক তথাকথিত অখ্যাত নেতা, যার দলে গোটা দেশে মাত্র দু'জন সাংসদ রয়েছে, তাঁর পরামর্শে চলছেন দেশের বিরোধী দলনেতা।
