চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: গণপিটুনির হাত থেকে যুবককে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িতেও। রণক্ষেত্রের চেহারা নিল হীরাপুরের ভালাডিহা গ্রাম। রাতে অজ্ঞাত পরিচয়ের যুবককে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে জিজ্ঞসাবাদে অসংলগ্ন উত্তর মেলায় শুরু হয়ে যায় মারধর। খবর পেয়ে পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধার করতে গেলে গ্রামবাসীরা বাধা দেয়। তখনই আক্রান্ত হন সিভিক ভলান্টিয়ররা। গণপিটুনির শিকার ওই যুবকরে নাম শেখ বাপ্পা। বাড়ি বর্ধমানের জামালপুরে। তবে সে কেন বা কীভাবে ওই গ্রামে পৌঁছালো সেই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
[আরও পড়ুন: বাইকে চড়ে এসে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দুষ্কৃতীদের গুলি, মৃত্যু সিপিএম কর্মীর]
ভালাডি গ্রাম এমনিতেই শহর থেকে অনেকটা দূরে দামোদর নদীর ধারে বিচ্ছিন্ন গ্রাম। জঙ্গলাকীর্ণ এই গ্রামে বাইরের লোকের বিশেষ আনাগোনা নেই বললেই চলে। কিন্তু রাতের বেলায় বাইরের লোককে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। সন্দেহভাজন শেখ বাপ্পা নামে ওই যুবক সাইকেল নিয়ে ঘোরাফেরা করছিল। তাকে আটকে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন স্থানীয়রা। অসংলগ্ন উত্তর দিতে শুরু করে যুবক। জামালপুর থেকে কীভাবে সাইকেলে চড়ে গ্রামে এল সেই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সঠিক উত্তর মেলেনি। এরপরেই গ্রামের লোকেরা তাকে ধরে দুর্গামন্দিরে আটকে রাখে। মারধর শুরু হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে প্রবল বাধার মুখে পড়ে। গ্রামবাসীদের দাবি যুবকের পকেটে মোটরবাইকের চাবি রয়েছে। পকেটে পাওয়া গেছে সূঁচ- সুতো। নিশ্চয়ই দূরে কোথাও মোটরবাইক রাখা রয়েছে। বাচ্চা চুরি করে বস্তায় ভরে নিয়ে পালাবে। এইসব নানা প্রশ্ন উঠতে থাকায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। ওই যুবককে পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। কার্যত পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাই করে শুরু হয় গণপিটুনি। উদ্ধার করতে গেলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়রদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। গ্রামবাসীদের মারে আক্রান্ত হন পাঁচজন সিভিক ভলান্টিয়র। ঘটনায় একজনের মাথা ফাটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হীরাপুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। ওই বাহিনী গণপিটুনির শিকার হওয়া যুবক ও আক্রান্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের উদ্ধার করে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে আক্রান্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশকে হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীকে আটক করেছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে নিম্নচাপ, তিনদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রাজ্যে]
শুক্রবারই আসানসোলে দুটি গণপিটুনির ঘটনা সামনে এসেছিল। জামুড়িয়ায় ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে মারধর করা হয়েছিল। ওইদিনই কুলটি থানা এলাকার শীতলপুরে এক ভিক্ষুক গণপিটুনির শিকার হয়। ওই দু’টি ঘটনায় আক্রান্ত হওয়া যুবকদের বাড়ি হীরাপুর থানা এলাকায়।
The post বিল পাশের পরেও চোর সন্দেহে যুবককে গণপিটুনি, বাঁচাতে গিয়ে মাথা ফাটল পুলিশের appeared first on Sangbad Pratidin.
