মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: এক গৃহবধূ তরুণীকে গর্ভবতী অবস্থায় ধর্ষণ এবং তাঁর শিশুকে জোর করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনায় শোরগোল হাওড়ার (Howrah) বালি থানায় এলাকায়। শুধু তাই নয়, ওই তরুণী যে স্বেচ্ছায় তার শিশুকে বিক্রি করেছে এই মর্মে স্ট্যাম্প পেপারে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে পুলিশ এই ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি বিক্রি হওয়া শিশুটিকেও উদ্ধার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বালির বাসিন্দা বছর ২১ এক তরুণী গৃহবধূ অভিযুক্তের গিরিরাজের বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করতেন। গিরিরাজ বস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ওই গৃহবধূর স্বামী বর্তমানে তাঁর সঙ্গে না থাকায় তরুণীকে কাজ করতে হচ্ছিল। অভিযোগ, গিরিরাজ তাঁকে মাঝে মধ্যেই ধর্ষণ করত। গিরিরাজের কাছে মাঝে মাঝে আসত শংকর। তিনি পেশায় প্রাক্তন রেলকর্মী। শংকর ওই তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করত বলে অভিযোগ। এমনকী শংকর ও গিরিরাজ দু’জনেই তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
[আরও পড়ুন: হানি ট্র্যাপ! রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা, গ্রেপ্তার বিজেপি নেত্রীর মেয়ে]
এদিকে গত এপ্রিল মাসে তরুণীর প্রসবের সময় হয়ে যায়। গিরিরাজ ও শংকর সালকিয়ার এক নার্সিংহোমে ওই তরুণীকে ভরতি করিয়ে দেয়। অভিযোগ, সন্তান জন্মের পরে এবার গিরিরাজ ও শংকর তরুণীকে চাপ দিতে থাকে গিরিরাজদের পরিচিত লেকটাউনের বাসিন্দা বিষ্ণু শর্মা ও স্বাতী শর্মার কাছে সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তরুনী রাজি হননি। বেগতিক দেখে তারা সন্তানকে তরুণীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনা করে। সেই মতো কাজও করে। এদিকে ওই তরুণী গিরিরাজদের হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করতে কলকাতায় তাঁর মাসির কাছে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তাতেও সে তার শিশুসন্তানকে রক্ষা করতে পারেননি। গত ৯ই মে তরুণী তাঁর শিশুকে নিয়ে কলকাতায় চলে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ তখন গিরিরাজ, শংকর, বিষ্ণু ও স্বাতী তাঁর পথ আটকায়। তারা ওই তরুণীকে তার শিশুটিকে দিয়ে দিতে বলে। তখন ওই তরুণী শিশুটিকে না দিলে গিরিরাজরা শিশুটিকে কেড়ে নিয়ে চলে যায়। তারা শিশুটিকে সালকিয়ার বাসিন্দা শতাব্দী গুপ্ত ও রাজেশ গুপ্তের কাছে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। ৯ তারিখ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত ওই তরুণী কাউকে কিছু বিষয়টি জানাননি। পরে বুধবার বালি থানায় তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বালি থানার পুলিশ তদন্তে নেমে গিরিয়াজ, শংকর, বিষ্ণু, স্বাতীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের মোবাইল থেকে তথ্য পেয়ে বালি থানার পুলিশ, মালিপাঁচঘড়া থানার পুলিশ যৌথভাবে তল্লাশি চালিয়ে মালিপাঁচঘড়া থানা এলাকার বাসিন্দা শতাব্দী গুপ্ত ও রাজেশ গুপ্তর বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। শিশুটি এখন বয়স দেড় মাস। তরুণী পুলিশকে জানিয়েছে, শিশুকে চাইলে শংকর তাঁকে জানায় স্ট্যাম্প পেপারে সই করে তিনি শিশুটিকে বিক্রি করেছে। তাই বেশি কিছু বললে বা পুলিশের কাছে গেলে তরুণী নিজেই ফেঁসে যাবে। ভয়ে তিনি এতদিন চুপ ছিলেন। পুলিশের এক কর্তা বলেন, তাঁরা খতিয়ে দেখছেন বিষ্ণু ও স্বাতী এই ধরনের শিশু কেনাবেচা আগেও করেছে কিনা। ওই তরুণীও স্বেচ্ছায় তার শিশুকে বিক্রি করেছিল কিনা তাও দেখা হবে। বৃহস্পতিবার সকলকেই হাওড়া আদালতে পুলিশ তোলে।