shono
Advertisement

শিয়ালে খোবলানো গাজোলের শিশুর ঠিকানা হবে মার্কিন মুলুক

মালদহ থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, ভাল থাকুক রক্তিম। The post শিয়ালে খোবলানো গাজোলের শিশুর ঠিকানা হবে মার্কিন মুলুক appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 01:53 PM Sep 11, 2018Updated: 01:56 PM Sep 11, 2018

বাবুল হক, মালদহ: রাখে হরি তো মারে কে! তা-ও আবার গাজোলের ঝোপ-জঙ্গল থেকে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে একেবারে আমেরিকায়। তার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। গাজোলের কোনও এক গ্রামে ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে পড়েছিল শিশুটি। শিয়ালে খুবলে খেয়েছিল পায়ের গোড়ালির একাংশ। খেয়ে ফেলেছিল শিশুটির অণ্ডকোষও। ঘটনা আড়াই বছর আগের। মাত্র ছ’মাস বয়সের সেই পরিত্যক্ত শিশুটিকে সেদিন উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। প্রশাসনের উদ্যোগে তার চিকিৎসা করানো হয়। তারপর যথারীতি হোমে ঠাঁই হয়েছিল তার। কিন্তু শিয়ালে শিশুটির যৌনাঙ্গ খেয়ে ফেলায় মেডিক্যাল বোর্ডও তার লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারেনি। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন,  শিশুটির বয়স ১৮ বছর হওয়ার পর সে-ই নিজের ইচ্ছে মতো লিঙ্গ বেছে নেবে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সেই প্রতিবন্ধী শিশুটির বয়স এখন মাত্র ৩ বছর। প্রশাসনের তরফে তার নাম রাখা হয়েছে রক্তিম। তার বাবা-মায়ের কোনও হদিশ নেই। এই আড়াইটা বছর রক্তিমের কেটেছে মালদহের ইংলিশবাজারের চণ্ডীপুরের একটি হোমে। খুশির কথা হল, এবার আদরে বেড়ে উঠবে রক্তিম। না, মালদহে নয়। সে বড় হয়ে উঠবে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে।

Advertisement

বছর তিনেক আগে মালদহ থেকে এমনই এক অসহায় শিশু অর্ঘ্য পাড়ি দিয়েছিল ফ্রান্সে। সেই দেশেই মানুষ হচ্ছে অর্ঘ্য। এবার রক্তিমের পালা। মালদহের রক্তিমকে দত্তক নিলেন এক কোটিপতি আমেরিকান দম্পতি। দত্তক নেওয়ার সইসাবুদের কাজ শেষ। মালদহ থেকে রক্তিম যাচ্ছে মার্কিন দম্পতির ঘরে। মালদহের জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অনাথ শিশু রক্তিমকে দত্তক নিয়েছেন ওই দম্পতি। তাঁরা হলেন এনারা গ্রাহাম ও তাঁর স্ত্রী ডায়না গ্রাহাম। যদিও তাঁদের ছ’বছরের এক শিশুকন্যাও রয়েছে। সোমবার মালদহের এক অতিথিশালায় নিজের শিশুকন্যা জেসির পাশে রক্তিমকে দাঁড় করিয়ে সহাস্যে সেলফিও তোলেন  ব্যবসায়ী দম্পতি। ছিলেন জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকরাও।

[লুঙ্গিতেই লুকিয়ে মৃত্যুফাঁদ, প্রাণ গেল ক্যানসার আক্রান্তের]

মালদহ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে,  সরকারি কয়েকটি কাগজপত্র তৈরির অপেক্ষায় রয়েছেন ওই দম্পতি। রক্তিমকে জন্মের শংসাপত্র দিচ্ছে প্রশাসন। তারপর রক্তিমের ভিসা হয়ে গেলেই নতুন বাবা-মায়ের সঙ্গে সে আমেরিকায় পাড়ি দেবে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রচারিত আন্তর্জাতিক স্তরের একটি ওয়েবসাইট মারফত আমেরিকার ওই ব্যবসায়ী দম্পতি  রক্তিমের খবর জানতে পারেন। তারপরই আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে রক্তিমকে দত্তক নিতে মালদহে আসেন তাঁরা। এক সপ্তাহ ধরে সেখানেই রয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে মালদহ জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তরের শিশুসুরক্ষা আধিকারিক শিবেন্দুশেখর জানা জানিয়েছেন, এতদিন ওই শিশুটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অধীনে বড় হচ্ছিল। ভালবেসে তার নাম রাখা হয়েছে রক্তিম। সরকারি একটি ওয়েবসাইটে দত্তক নেওয়ার বিষয়ে যে তথ্যগুলি থাকে, সেখানে রক্তিমের কথা তুলে ধরা হয়েছিল। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রক্তিমকে দেখেই গ্রাহাম দম্পতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপরই ওই পরিবারটি সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানার পরই সরকারি নিয়ম মেনে রক্তিমকে তুলে দেওয়া হয়েছে। কোটিপতি ব্যবসায়ীর ঘরে স্বাচ্ছন্দে থাকবে রক্তিম। এমনটাই আশা  জেলার আধিকারিকদের।

বলা বাহুল্য, যাঁরা দত্তক নেন, অন্তত দু’বছর ধরে তাঁদের মনিটরিং করা হয়। এক্ষেত্রেও আমেরিকার দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওই দম্পতির মনিটরিং করা হবে। রক্তিমের অণ্ডকোষটি নেই। তবে সে সাবালক হলেই নিজের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারবে। এটা কলকাতার একটি মেডিক্যাল বোর্ড থেকেই ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। ওই বিদেশি দম্পতিকে সব কিছুই জানানো হয়েছে। মালদহের শিশুসুরক্ষা আধিকারিক শিবেন্দুশেখর জানা বলেন, ‘রক্তিম খুব ভাল থাকুক। এটাই আমাদের প্রার্থনা।’

[মাদকের টাকা মেটাতে বাবাকে ‘বন্ধক’ রাখল গুণধর ছেলে]

The post শিয়ালে খোবলানো গাজোলের শিশুর ঠিকানা হবে মার্কিন মুলুক appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement