shono
Advertisement

ভূত খুঁজতে কুখ্যাত বেগুনকোদরে রাত জাগা শুরু প্রশাসনের

সূর্য ডুবলেই নেমে আসে মূর্তিমান বিভীষিকা!!! The post ভূত খুঁজতে কুখ্যাত বেগুনকোদরে রাত জাগা শুরু প্রশাসনের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:29 AM Dec 28, 2017Updated: 03:59 AM Dec 28, 2017

সুমিত বিশ্বাস: ‘ভুতুড়ে স্টেশন’ বেগুনকোদরে ভূতের ভয় ভাঙাতে এবার রাত জাগবে প্রশাসন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের রাঁচি ডিভিশনের কোটশিলা-মুরি শাখায় পুরুলিয়ার বেগুনকোদর স্টেশন গত পাঁচ দশক ধরে ‘ভুতুড়ে স্টেশন’ বলে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এমন কী, এই আতঙ্কের জেরে বহুদিন এই স্টেশনের ঝাঁপও বন্ধ ছিল। বছর দশেক আগে এই স্টেশনটি চালু হলেও এখনও ভূতের আতঙ্ক তাড়া করে ফেরে যাত্রীদের।

Advertisement

গুজব রয়েছে রাতের দিকে কোনও ট্রেন ওই স্টেশনের আপ বা ডাউন লাইনে ঢুকলে সামনে থেকে একটি ছায়া মূর্তি দৌড়ে আসে। এমন কী, মধ্য রাতে না কি চাদর মুড়ি দেওয়া কোনও ব্যক্তি ঘুরে বেড়ান স্টেশন চত্বরে। শোনা যায় নানা ধরনের আর্তনাদও। এই সব গুজবের ভয় ভাঙাতেই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন বিজ্ঞান মঞ্চ, রেল ও পুলিশকে নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার ওই স্টেশনে রাত জাগবে। গুজবের এই ভূতের ভয়কে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি পর্যটন ও টুর অ্যান্ড ট্রাভেল সংস্থা ‘ঘোস্ট টুরিজম’ হিসাবে পর্যটক টেনে মুনাফা করছে এখানে।

[ফিরে দেখা ২০১৭: সাড়া ফেলল যে সব নজিরবিহীন ঘটনা]

পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এই কুংস্কারকে ঘিরে ব্যবসা এবং অপপ্রচার রুখতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মতো চিরতরে ভূতের ভয় ভাঙাতে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে প্রশাসন এমন উদ্যোগ নিলেও অভিযোগ, একটি চক্র রীতিমতো ওই এলাকায় এই আতঙ্ক জিইয়ে রাখতে নানাভাবে প্রচার চালাছে। এ কথাও কানে এসেছে প্রশাসন ও বিজ্ঞান মঞ্চের। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলোকেশপ্রসাদ রায় বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি ওই স্টেশনকে ঘিরে নানা কুসংস্কার চলছে। ভূত বলে যে কিছু নেই সেটা মানুষকে বুঝিয়ে সকলকে অভয় দিতেই বিজ্ঞান মঞ্চকে নিয়ে আমরা বৃহস্পতিবার থেকে কিছু প্রচারের কাজ চালাব।”

স্থানীয় ও রেল সূত্র জানা গিয়েছে, ১৯৬০ সাল নাগাদ এই স্টেশন তৈরি হয়। বছর ছয়েক চলার পরই ১৯৬৬ সাল নাগাদ সেখানকার তৎকালীন স্টেশন মাস্টার ও তাঁর স্ত্রীর অস্বাভিবকভাবে মৃত্যু হয়। প্রচার আছে, ওই রেল কর্মী ও তাঁর স্ত্রী না কি খুন হয়েছিলেন। কেউ বলেন, তাঁরা না কি আগুনে পুড়ে মারা যান। কিন্তু এই বিষয়ে কারও কাছে কোনও সঠিক তথ্য নেই। রেল সূত্র জানা গিয়েছে, ওই স্টেশন মাস্টারের মৃত্যুর পরই যে রেল কর্মীরা ওখানে মোতায়েন হয়েছিলেন তাঁরাই না কি রাতে ট্রেন স্টেশনে ঢুকলেই লাইনের উপর ছায়ামূর্তিকে ছুটে আসতে দেখেছেন। কেউ কেউ দেখেছেন সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে কাউকে স্টেশনে ঘুরে বেড়াতে। তার পরই শোনা যায় আর্তনাদ, চিল চিৎকার, কান্নার আওয়াজ। ওই সমস্ত রেল কর্মীরা কিছু দিন পর পরই উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে গোটা বিষয়টি জানিয়ে বদলির দাবি করেন। তার পর থেকেই ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় এই স্টেশনের।

২০০৬ সাল নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া শাখা রেলের তৎকালীন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার দ্বারস্থ হন। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই স্টেশন ফের চালু হয়। কিন্তু রেল শর্ত দেয়, শুধু দিনের বেলায় এই স্টেশনে ট্রেন থামবে। রেলের একজন এজেন্ট দিয়ে সেখানে টিকিট বিক্রি করা হয়। তারপর থেকে সেই রেওয়াজই আজও চলছে।

এখনও প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে প্রায় দু’শোজন যাত্রী যাতায়াত করেন। পাঁচটি লোকাল ট্রেন শুধুমাত্র দিনের বেলায় বেগুনকোদরে স্টপেজ দেয়। কিন্তু এই স্টেশনে না আছে কোনও প্ল্যাটফর্ম না আছে কোনও আলোর ব্যবস্থা। সন্ধ্যা নামলেই কালো নিকষ অন্ধকারে ঢেকে যায় বেগুনকোদর স্টেশন লেখা বোর্ডটি। ঘুটঘুটে অন্ধখারআর ঝিঁ ঝিঁর ডাকে যেন একদম ভৌতিক পরিবেশ! পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস এ সম্পর্কে বলেন, “ আমরা বিজ্ঞান মঞ্চকে সঙ্গে নিয়ে বেগুনকোদর স্টেশনকে নিয়ে যে ভূতুড়ে বে পরিবেশের গুজব আছে তা দূর করে কুংস্কারের বিরুদ্ধে লাগাতর প্রচার চালাব।” শুধু আজ বৃহস্পতিবারই নয়, এর পর থেকেই প্রশাসনের গোটা টিম ধারাবাহিকভাবে এই প্রচার চালাবে।

পুরুলিয়ার ভরপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, “বিজ্ঞান মঞ্চ আমাদের কাছে জানিয়েছে তারা এই ভূতুড়ে গুজব একেবারে দূর করবে। তার জন্য রেলের তরফে তাঁদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে জিআরপি থাকবে।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একাধিক সংস্থা ওই স্টেশনে তাবু ফেলে এই ব্যাপারে তথ্যচিত্র তৈরি করেছে। সেই স্বল্প দৈর্ঘের ছবিতে অংশ নেওয়া এক অভিনেত্রী না কি শুটিংয়ের সময় জ্ঞান হারিয়ে ছিলেন। এমন কী, পরে ছেলেদের কণ্ঠে তাঁকে নাকি সুরে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল। এমন সব গুজবের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া শাখা প্রচার করতে শুরু করেছে। সংগঠনের পুরুলিয়া শাখার সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় এ সম্পর্কে বলেন, “২০০৭ সালে এই স্টেশন ফের চালুর পরই ২০০৯ সালে আমরা বেগুনকোদরকে পূর্ণাঙ্গ স্টেশন তৈরির জন্য রেলের কাছে দাবি জানাই। এবার সবাইকে নিয়ে রেলের কাছে ফের সেই দাবি রাখব।”

[ফিরে দেখা ২০১৭: লেগেছে যে সব কেলেঙ্কারির দাগ]

The post ভূত খুঁজতে কুখ্যাত বেগুনকোদরে রাত জাগা শুরু প্রশাসনের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement