শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: কেউ সাইকেলে, কেউ বা হেঁটে বাড়ি যাওয়ার জন্য মরিয়া। কিন্তু এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পা রাখার জন্য লকডাউনই সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা। তাই মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার পুলিশের হাতে আটক হয়ে বাড়ি ফেরা আর হল না বিভিন্ন জেলার শ্রমিকদের। শ’খানেক শ্রমিক সোমবার রাত থেকে আটকে ফরাক্কায়। মেলেনি খাওয়াদাওয়া, প্রশাসনিক সাহায্যও। রাত্রি পেরিয়ে পরেরদিন বিকেল হয়ে যাওয়ার পর মুর্শিদাবাদের এক সরকারি অতিথি নিবাসে শেষপর্যন্ত ঠাঁই মিলল এই শ্রমিকদের। বাড়ি অনেক দূর এখনও।
কোচবিহারের তুফানগঞ্জের ১৮ জন শ্রমিক তাঁতের কাজ করতেন নদিয়ার ফুলিয়ায়। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে কাজের বালাই নেই। সবই তো বন্ধ। মন বাড়ি বাড়ি করছিল। কিন্তু ট্রেন, বাস যে বন্ধ, কীভাবে যাবেন? প্রথম দফার লকডাউনের সময় পেরিয়ে গিয়েছে ভাবতে ভাবতেই। দ্বিতীয় দফা শুরু হওয়ার পর ভেবেচিন্তে সাইকেল নিয়েই কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তাঁরা। শনিবার রাতে বেরিয়ে সোমবার সন্ধেবেলা পৌঁছন ফরাক্কায়। মুর্শিদাবাদ আর মালদহের মধ্যে ফরাক্কা অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ গেটওয়ে। সে অর্থ দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সংযোগের পথ। তো এই ফরাক্কায় ১৮ জন শ্রমিক পৌঁছতেই বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ আটকে দেয় তাঁদের। রাত কাটে পথেই।
[আরও পড়ুন: স্নাতকোত্তরের পাঠক্রমে COVID-19, পথ দেখাল পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়]
একইভাবে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন ফালাকাটার চরিত্র বিশ্বাস, তন্ময় বর্মণরা। তাঁরা কাজের সূত্রে শান্তিপুরে ছিলেন। একইভাবে তাঁরাও বাড়ির পথে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। লাভ হয়নি। দুর্গাপুরের নেটওয়ার্কিং মার্কেটে কাজ করেন বিহারের পূর্ণিয়ার ভিকনপুর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম জিনালি। তিনি ও তাঁর ৫ বন্ধুও একইভাবে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আরেকদিকে, ঝাড়খণ্ডের কোডারমায় মালদহের ৬ শ্রমিক কাজ করতেন। তাঁরা বাড়ি পৌঁছনোর জন্য ১০ দিন ধরে হেঁটে ফরাক্কা পৌঁছেছিলেন। তা পেরলেই আপন দুয়ারে পৌঁছে যেতেন। কিন্তু লকডাউন। পুলিশ কিছুতেই আর এগোতে দিল না। এভাবেই সোমবার রাতটা বিভিন্ন জায়গার শ্রমিক এখানে মিলিত হয়ে একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন।
[আরও পড়ুন: লকডাউনে বন্ধ উপার্জন, মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী কাটোয়ার বধূ]
পথে এতটা ধকলের পর সারারাত একটু খাবারও জোটেনি। ক্লান্ত শরীরগুলো ধুঁকছিল। প্রশাসনের একটু সাহায্য ভিক্ষা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। হয় বাড়ি যেতে দিন, নয়ত কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রেখে খাবারদাবার দিন। এই সুরেই কথা বলছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকালে এই শ্রমিকদের খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন বিএমওএইচ সজল কুমার পণ্ডিত। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। ওখানেই সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। তাতে দেখা যায়, শ’খানেক শ্রমিকের প্রত্যেকেই সুস্থ। শেষমেশ বিকেলে তাঁদের ‘পথের সাথী’ অর্থাৎ পিডব্লুডি’র অতিথিশালায় রাখা হয় তাঁদের। নিজের ঘর না হলেও, মাথার উপর ঠাঁই পান।
The post দীর্ঘ পথ পেরিয়েও বাড়ি ফেরা হল না, ফরাক্কায় পুলিশের হাতে আটক ১০০ শ্রমিক appeared first on Sangbad Pratidin.
