সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজনীতির পথ মসৃণ নয় একেবারেই। আর সেই দুর্গম পথের শেষ বলে কিছু নেই। তাই চড়াই-উতরাই পেরিয়ে রাজনীতির পথ এগোতে হয় রাজনীতিকদের, বিশেষত যাঁরা উচ্চাকাঙ্ক্ষী। এখন প্রশ্ন হল, বহুল প্রচলিত এসব বক্তব্যের চর্বিতচর্বণ কেন? উত্তরটা লুকিয়ে আজকের দিনে বঙ্গ রাজনীতির এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনায়, গুরুত্বপূর্ণ দিনে। রবিবার বারাকপুরের ‘বাহুবলী’ বলে খ্যাত সাংসদ অর্জুন সিং (Arjun Singh) বিজেপি (BJP) ছেড়ে ফিরলেন পুরনো শিবিরে, যোগ দিলেন তৃণমূলে (TMC)। এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার অর্জুনের দলবদলের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু কেন এতবার এই পার্টি থেকে ওই পার্টিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাংসদ? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই রাজনীতির ‘নীতি’র আপ্তবাক্য নিয়ে আলোচনার অবতারণা।
সেই কবে সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে নৈহাটি কলেজে পড়ার সময় রাজনীতিতে হাতেখড়ি অর্জুন সিংয়ের। বাবা সত্যনারায়ণ সিং ছিলেন ভাটপাড়ার কংগ্রেস (Congress) বিধায়ক। দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাতেও ইতি টানেন অর্জুন। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের জগদ্দল, ভাটপাড়া, নৈহাটির একের পর এক পাট কারখানার তখন রমরমা। কিছুদিন সেই কারখানায় শ্রমিক হিসেবে চাকরি করেন তিনি। বলতে গেলে সেখান থেকেই অর্জুনের প্রত্যক্ষ রাজনীতির ময়দানে নামা। মজদুর সংগঠনের কাজ দিয়েই শ্রমিক নেতা হিসেবে উত্থান তাঁর। মূলত বামপন্থী (Left Front) রাজনীতির বিরোধিতায় অর্জুনের লড়াই শুরু হয়। সেই নীতি থেকে অবশ্য অর্জুন আজও লক্ষ্যচ্যুত হননি।
[আরও পড়ুন: অর্জুনের ‘ঘর ওয়াপসি’, পদ্মশিবির ছেড়ে তৃণমূলে ফিরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট নতুন ছবি]
১৯৯৫ সালে প্রথম কংগ্রেসের হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে ভাটপাড়ার প্রার্থী হন অর্জুন সিং। জয়ী হয়ে সোজা ভাটপাড়া থেকে বিধানসভায় যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে ‘হাত’ শিবির ছেড়ে ঘাসফুলে পদার্পণ এবং ফের নির্বাচনী লড়াইয়ে জয়লাভ। ভাটপাড়ার বহুদিনের বিধায়ক ছিলেন অর্জুন সিং। সব ঠিকঠাকই ছিল। শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিলেন অর্জুন। দুষ্টের দমনে তাঁর ‘বাহুবলী’ ইমেজ গড়ে ওঠে দিনদিন। যদিও সাদা-কালো, ন্যায়-অন্যায়ের প্রকৃত ছবি সকলের আড়ালেই রয়ে গিয়েছিল।
[আরও পড়ুন: দীর্ঘদিন ‘নিখোঁজ’ থাকার পর ফের রাজনৈতিক টুইট নুসরতের, কটাক্ষ করলেন মোদিকে]
গোল বাঁধল ২০১৯ সালে। বারাকপুর (Barrackpore) লোকসভা কেন্দ্র থেকে ঘাসফুলের হয়ে সাংসদ পদে লড়াইয়ের দাবি তুললেন অর্জুন। ‘দিদি’ নারাজ, নাছোড় অর্জুন। এই জেদাজেদির মাঝে আচমকাই তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরের পা রাখেন তিনি। সাংসদ পদপ্রার্থীও হন। সেই বারাকপুর থেকে। নিজের চেনা মাটিতে দাঁড়িয়ে জোড়াফুলকে ধূলিসাৎ করে পদ্মফুল ফোটান ‘বাহুবলী’ অর্জুন। বিজেপি সাংসদ হিসেবে রাজনৈতিক কেরিয়ারে নবজন্ম হয় তাঁর।
কিন্তু পদ্মবনে বেশিদিন মন টিকল না। প্রথমত দিল্লির শীর্ষনেতৃত্বের তেমন নেকনজরে পড়েননি,তাই সংগঠনের কাজ খুব একটা ভালভাবে করতে পারছিলেন না। বিজেপি সহ-সভাপতির পদ পেয়েও তেমন লাভ হয়নি। দ্বিতীয়ত পাটশিল্প (Jute) নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতি তাঁর মোটেই পছন্দ হয়নি। সরাসরি বিরোধিতায় নামেন বারাকপুরের সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর অনড় চাপের মুখে বেশ খানিকটা সময় পর মাথা নোয়ায় জুট বোর্ড। প্রত্যাহার করা হয় পাটের বর্ধিত দাম।
[আরও পড়ুন: ঝালমুড়ির আড়ালে মৃত্যু পরোয়ানা! যুবকের প্রাণ বাঁচালেন বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসকরা]
তারপরও অবশ্য ‘তৃতীয় পাণ্ডব’ পিছুটান ছাড়তে পারছিলেন না। তাই শেষমেশ মনস্থির করেন, ঘরে ফেরার। ২২ মে, রবিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ঘাসফুলে ফিরলেন ঘরের ছেলে। কিন্তু কেন তাঁর বারবার এই দলবদল? শুধুই কি উচ্চাশা নাকি নীতির সঙ্গে বিরোধ হলেই দলত্যাগ? ঘনিষ্ঠরা বলেন, অর্জুন জনদরদী। জনতার বিন্দুমাত্র সমস্যা তিনি সইতে পারেন না। তার জন্য কারও বিরুদ্ধে লড়াই করতেই পিছপা হন না। ঠিক যেমন একদা ক্ষমতাসীন সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর রাজ্যের শাসকদলের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন। আর এবার তাঁর নতুন লড়াই শুরু হল কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে।