shono
Advertisement

অপরাধের বিচারে স্বয়ং মা, ঝাড়গ্রামের পুজোয় এবারের চমক ‘যমালয়ে জীবন্ত দুর্গা’

চমক থাকছে মণ্ডপসজ্জা এবং প্রতিমার আদলেও। The post অপরাধের বিচারে স্বয়ং মা, ঝাড়গ্রামের পুজোয় এবারের চমক ‘যমালয়ে জীবন্ত দুর্গা’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:02 PM Sep 13, 2019Updated: 09:02 PM Sep 13, 2019

সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: যমের দরবার। হাজির রয়েছেন চিত্রগুপ্ত। ঘুরে বেড়াচ্ছেন যমের জীবন্ত দূতেরা। সেই দরবারে চলছে একের পর এক বিচার। বিচারের পর রয়েছে চরম শাস্তিও। দশ ফুট উচ্চতার যমের সেই যমালয়ে ঢুকলে গা ছমছম করবেই। আলো আঁধারির সেই যমালয় এবং যমের দরবারে বিচার চলছে বৃদ্ধ পিতা-মাতার উপর অত্যাচার করা সন্তানদের। বিচার চলছে কন্যাভ্রূণ হত্যা এবং সরকারি প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার জন্য কাটমানি নেওয়ার, নির্বিচারে বৃক্ষছেদনের। সমাজের এমনই নানা অপরাধ, অন্যায়ের বিচারের পর রয়েছে চরম শাস্তি। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: আগমনিতে নতুন পোশাকের গন্ধ পাবে ওরাও, আসানসোলে চালু বস্ত্র ব্যাংক]

অশুভ নাশ করে শুভর প্রতিষ্ঠায় আসছেন “যমালয়ে জীবন্ত দুর্গা”। এই ভাবনাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ঝাড়গ্রামের বিড়িহাড়িতে উদীয়মান তরুণ সংঘ পরিচালিত দুর্গাপুজোয়। শাস্তির স্বরূপ দেখাতে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে নানা মডেল। সেই সব মডেল দেখলেই বুক কেঁপে উঠবে। মণ্ডপ একেবারে শীর্ষ বিচারালয় – সুপ্রিম কোর্ট। তার ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে জীবন্ত যমালয়। সেই যমালয়ে দেবী দুর্গা প্রতিমাটিও অভিনব। দেবীর মুখাবয়ব থাকবে সচল। চোখের পলক ফেলে বা মুখের ভাবভঙ্গিতে চলনশীলতার ছোঁয়া।ঝাড়গ্রাম ব্লকের বিড়িহাড়ি উদীয়মান তরুণ সংঘের পরিচালনায় এবার চতুর্থতম বর্ষে বিড়িহাড়ি সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি তাঁদের থিম রেখেছে “যমালয়ে জীবন্ত দুর্গা”।
একসময় মাওবাদী সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত জঙ্গলমহলে এই বিড়িহাড়ি ছিল অশান্তির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। বিড়িহাড়ির পরিচিতি ছিল “মাওবাদীদের রাজধানী” হিসেবে। মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেণজি-সহ তাবড় নেতৃত্বে নিত্যদিন দিন এই গ্রামে আনাগোনা থাকত। নিজেদের মতো বিচারসভা বসিয়ে মানুষ খুন করে ফেলা হত। অপহরণের পর খুন করে দেহ লোপাটের নজিরও আছে। এলাকায় শান্তি ফেরার পরেও এই গ্রামের সংলগ্ন জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয়েছে মানুষের কঙ্কাল,বন্দুক।
এহেন জঙ্গলমহলের একটি গ্রামে ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে সর্বজনীন দুর্গাপূজা। প্রথমবারের শুরুতেই চমক ছিল এই পুজোয়। সেই থিমের জেরে রাতারাতি বিড়িহাড়ির দুর্গাপূজা বিখ্যাত হয়ে যায়। প্রথম বছর ছিল “পাতাল দূর্গা”। মাটির নিচ থেকে উঠে এসেছিলেন দেবী। দ্বিতীয় বার ছিল “অদৃশ্য দুর্গা”। দেবী এই আছে, এই নেই। তৃতীয় বছর ছিল “ডুবন্ত দুর্গা”। বিড়িহাড়ি গ্রামের পুজা মানেই নতুন কিছু ভাবনা এবং তার বহিঃপ্রকাশ দেখার সুযোগ। ব্যতিক্রম হল না এবারও।
“যমালয়ে জীবন্ত দুর্গা” এই থিমের মধ্যে দিয়ে উদ্যোক্তারা জানান, সারা বছর বিড়িহাড়ি গ্রামে বাইরের লোকের তেমন পা পড়ে না। খবরও রাখে না কেউ। কিন্তু পুজার সময় জমে ওঠে গ্রাম। মানুষে মানুষে ছয়লাপ হয়ে যায়। গ্রামে যেন প্রাণ ফিরে আসে। এসবের কথা মাথায় রেখেই তরুণ সংঘের ভাবনা, দেবী যেন এখানে সত্যিই জীবন্ত। যমালয় কেমন ছিল, কেমন ছিল যমের দরবার – নিজেদের কল্পনাশক্তি দিয়ে সেসব দৃশ্য নির্মাণ করতে চান এখানকার সদস্যরা। যমালয়কে সমকালীন করে তুলতে সুপ্রিম কোর্ট তথা সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের রূপে প্যান্ডেল গড়া হচ্ছে। পুজো কমিটির ভলান্টিয়াররা মুখোশের আড়ালে জীবন্ত যমদূত। আর তিনজন মানব মডেলের সাহায্যে দেবীর মুখ সচল রাখা হয়েছে। দেবী দুর্গার উচ্চতা এখানে তেরো ফুট।

[আরও পড়ুন: পুজোর বিশেষ গানে একসঙ্গে ধরা দেবেন মিমি-নুসরত-শুভশ্রী]

উদ্যোক্তারা জানান, সামাজিক বার্তা দিতে যমের বিচারালয়ে বর্তমান সমাজের নানা অপরাধগুলির বিচার দেখানো হয়েছে। বিড়িহাড়ি উদীয়মান তরুণ সংঘ ক্লাবের সম্পাদক জগদীশ মাহাতো বলেন, “আমাদের থিম – যমালয়ে জীবন্ত দুর্গা। আমরা এই থিমের মাধ্যমে সমাজে কঠোর বার্তা দিতে চাইছি। সমাজে যে বিভিন্ন অপরাধ দেখা যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে যমের আঠাশটি শাস্তির মাধ্যমে সচেতনতার কথা বলা হচ্ছে। আর এই পুজার সময়ই আমাদের গ্রামে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। তা তো এই দেবীর জন্যই। তাই দেবী এখানে জীবন্ত।” প্রত্যন্ত এলাকার দেবী আরাধনায় এধরনের উদ্ভাবনীই বোধহয় সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি প্রান্তিক মানুষজনের।

The post অপরাধের বিচারে স্বয়ং মা, ঝাড়গ্রামের পুজোয় এবারের চমক ‘যমালয়ে জীবন্ত দুর্গা’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement