ধীমান রায়, কাটোয়া: পঞ্চায়েতের কাজকর্মের হিসেব চেয়ে ও কাটমানি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন তো চলছেই। পাশাপাশি পঞ্চায়েত পরিচালনা করতে গেলে বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানাল বিজেপি। এনিয়ে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে তৃণমূল পরিচালিত ভাল্কি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি বুথে নিজেদের প্রতিনিধি মনোনীত করে কার্যত এক ‘সমান্তরাল পঞ্চায়েত’ গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছে বিজেপি। আউশগ্রাম ২নং ব্লকের ভাল্কি পঞ্চায়েতে স্মারকলিপির সঙ্গে দলীয় প্রতিনিধিদের তালিকাও জমা দিল স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব৷
[আরও পড়ুন: ঝাড়ফুঁকের নাম করে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত গুণিন]
শনিবার আউশগ্রাম ৫৩ নম্বর মণ্ডল কমিটির পক্ষ থেকে আউশগ্রাম ২ ব্লকের ভাল্কি পঞ্চায়েতে ৬ দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বিজেপি৷ দাবিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দিতে হবে। কাটমানির টাকা যাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে, তাদের অবিলম্বে টাকা ফেরত দিতে হবে। টিউবওয়েলের যন্ত্রাংশ কেনার জন্য টেন্ডার করতে হবে। অমরারগড় হাটে তোলা আদায় বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে বিজেপি একটি প্রতিনিধি তালিকাও জমা দিয়েছে৷ যে কোনও বুথে কাজ করতে গেলে তাদের মনোনীত প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে৷ তা না করে কোনও কাজ করা যাবে না৷
২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকার ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সবকটি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। ভাল্কি পঞ্চায়েতের ১৯টি আসনেও একইভাবে জয়লাভ করে। বিজেপির ৫৩ নম্বর মণ্ডল সভাপতি স্মৃতিকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধীদের কোনও প্রার্থীকে ভোটে লড়তে দেয়নি। কিন্তু লোকসভা ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে আমরা বহু বুথে জিতে রয়েছি। এটাই জনগণের আসল রায়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকারি উন্নয়নের কাজে যাতে কোনও দুর্নীতি না হয়, তার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ড নিজেদের খুশিমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আমাদের প্রতিনিধিদেরও জানিয়ে কাজ করতে হবে।’ লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই আউশগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসীদের ক্ষোভ বাড়ছে৷ কাটমানি ফেরতের দাবিতে বিরোধীশূন্য আউশগ্রামে লাগাতার বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে শাসকদলের নেতাকর্মীদের। চাপে পড়ে ইতিমধ্যে রামনগর পঞ্চায়েতের প্রধান পদত্যাগও করেছেন।
[আরও পড়ুন:মদ্যপ ছেলের ব্যবহারে অতিষ্ঠ, পিটিয়ে খুন করল বাবা]
রাজনৈতিক মহলের খবর, পঞ্চায়েতে শাসকদলকে চাপে রাখতে কার্যত অলিখিত এক সমান্তরাল পঞ্চায়েত গঠন করার প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি। স্মৃতিকান্তবাবু জানিয়েছেন, শুধু ভাল্কি পঞ্চায়েতেই নয়, ইতিমধ্যে তারা আউশগ্রাম ২ ব্লকের আরও দুটি পঞ্চায়েতে প্রতিনিধি তালিকা জমা দিয়েছেন। বুথ পিছু বিজেপির প্রতিনিধিদের মোবাইল নম্বর পাশে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষ যদিও বলেন, ‘পঞ্চায়েতের যে কোনও সিদ্ধান্ত নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করার পর নেওয়া হয়। ওই বোর্ড মিটিংয়ে একমাত্র নির্বচিত প্রতিনিধিরাই থাকতে পারেন। কোনও দলীয় প্রতিনিধি চাইলেই থাকতে পারেন না। যদি কাজের বিষয়ে কারও কিছু বলার থাকে, তারা তো নিজেদের বুথের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বললেই হয়ে যায়।’ বিজেপি আইনত ঠিক কাজ করছে না বলে দাবি করলেন রামকৃষ্ণ ঘোষ৷
ছবি: জয়ন্ত দাস৷
The post পঞ্চায়েতের কাজে নিজেদের প্রতিনিধি রাখার দাবি, ‘সমান্তরাল প্রশাসন’ তৈরির চেষ্টা বিজেপির appeared first on Sangbad Pratidin.
