অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: এসআইআরের জন্য মাত্র দু'টি মাস সময় যেন মানুষের জীবনের প্রতি মুহূর্ত কেড়ে নিচ্ছে! অসুস্থতা হোক কিংবা জীবনের কোনও বিশেষ অধ্যায় শুরু - সবেতেই 'বাগড়া' দিচ্ছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজের বিপুল চাপ। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ করা টার্গেট বিএলও-দের কাছে। অথচ হাতে এখনও প্রচুর ফর্মের কাজ বাকি। তাই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে সকলেই ছুটছেন সময়মতো কাজ শেষ করতে। ডোমকলের এক বিএলও-কে দেখা গেল, বিয়ের মাঝেও ডাটা এন্ট্রির কাজ করছেন! বরের পোশাক পরেও ঘরে একলা বসে অনলাইনে এসআইআরের কাজ করছেন। মোস্তাক আহমেদ নামে ওই বিএলও নিজেই বলছেন, 'এটা একটা ইতিহাস হয়ে থাকল।'
রবিবার মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ভাতশালার এক বিয়েবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল এমন ব্যতিক্রমী চিত্র। বাড়িভর্তি অতিথি, তার মাঝে ঘরবন্দি নববিবাহিত বর মোস্তাক আহমেদ। রাগ, অভিমান বা অন্য কোনও কারণে নয়। কর্তব্যবোধ আর কাজের চাপে নিজের বউভাতেও একলা ঘরে বসে এসআইআর ফর্মের ডাটা আপলোডের কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে! আসলে নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনেই হাতের একগুচ্ছ কাজ শেষ করতে এত তাড়া।
নববিবাহিত বিএলও মোস্তাক আহমেদ বউভাতের অনুষ্ঠানেও কাজে ব্যস্ত। নিজস্ব ছবি।
জানা গিয়েছে, বিএলও তথা প্রাথমিকের শিক্ষক মোস্তাক আহমেদের বাড়ি ডোমকলের ভাতশালায় হলেও তাঁর কাজের জায়গার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। সেখানে ইসলামপুরের আনন্দনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। তাঁর অধীনে রয়েছে ৭৭৪ জন ভোটারের এনুমারেশান ফর্ম বিতরণ, সংগ্রহ ও ডাটা আপলোডের দায়িত্ব। গোটা প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য হাতে সময় খুবই কম। তাই বউভাতের অনুষ্ঠানেও কাজ করে গেলেন মোস্তাক আহমেদ। তাঁর কথায়, “কাজটা নিখুঁতভাবে করতে গিয়ে এটা করতেই হচ্ছে, উপায় নেই। আমার কাছে ফর্ম জমা ও আপলোডের কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। হাতে সময় কম, তাই আজকের দিনেও আমাকে এনুমেরেশান ফর্ম আপলোড করতে হচ্ছে।”
প্রশাসনিক চাপে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো কীভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তার বাস্তব চিত্রই যেন উঠে এল ডোমকলের এই বিয়েবাড়িতে। তবুও 'কাজপাগল' মোস্তাক আহমেদ বলছেন, “এটা একটা গুরু দায়িত্ব। নববধূ ও বাড়ির লোকজন এর গুরুত্ব বুঝেছেন বলেই কাজটা করতে পারছি।” তারপরই মুচকি হেসে তিনি বলেন, “এটা একটা ইতিহাস হয়ে থাকল, ভবিষ্যতে যখন এসআইআর নিয়ে কথা উঠবে, তখন মানুষকে বলতে পারব যে ওই কাজের জন্য বউভাতের অনুষ্ঠানের দিনেও ঘরে বসে ডাটা এন্ট্রি করতে হয়েছে।”
