সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বর্ধমান স্টেশনে দুর্ঘটনার ৪৪ ঘণ্টা পর আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করল রেল। সোমবার বিকেলে রেলের তিন সদস্যর কমিটি বর্ধমানে তদন্তে যান। বর্ধমানের স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে এদিন প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নেওয়ার কথা ছিল। কোনও প্রত্যক্ষদর্শীই হাজির হলেন না শুনানিতে। শুধুমাত্র রেলের ২০ জন কর্মী তদন্তকারীদের কাছে বয়ান দিয়েছেন।
হাওড়ার ডিভিশনাল সেফটি অফিসার তাপসকুমার মাইতি, সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার রাজীব কুমার ও ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার বিপিন কুমার এই তিন সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তিনজনই বর্ধমানে সরেজমিনে ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখেন। শুনানির জন্য অপেক্ষা করলেও কোনও প্রত্যক্ষদর্শী বয়ান দিতে হাজির হননি। শনিবার রাতের ঘটনার সময় বহু মানুষ সেখানে ছিলেন। মোবাইলে ছবি, ভিডিও তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এদিন শুনানিতে কাউকেই পায়নি রেল। রেলের আধিকারিকরা মনে করছেন, এখানে সাক্ষ্য দিতে এলে পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই হয়তো কোনও সাধারণ মানুষ হাজির হননি। তবে তেমনটা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন রেলের কর্তারা। তবে এদিন রেলের ২০ জন কর্মীর শুনানিতে বয়ান নথিভুক্ত করেছেন। মূলত ঘটনার সময় তাঁরা সংলগ্ন এলাকাতেই কাজ করছিলেন বলেই জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: CAA’র সমর্থনে মিছিল ঘিরে বিজেপি-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, মাথা ফাটল ঝালদা থানার আইসির]
তবে কোনও প্রত্যক্ষদর্শী বয়ান দিতে না আসার নেপথ্যে রেলের গাফিলতিকেই দায়ী করা হয়েছে। অভিযোগ, এদিন যে শুনানি হবে সেই বিষয়ে রেলের তরফে সেভাবে প্রচার করা হয়নি। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রেলের আধিকারিকরা। বর্ধমানের স্টেশন ম্যানেজার রঞ্জিত কুমার জানিয়েছেন, বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে মোট ১৫টি সংবাদপত্রে এই বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, তদন্ত কমিটির সদস্যরা এদিন দুর্ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছেন। বিভিন্ন মাপজোক করা হয়েছে তাঁদের উপস্থিতিতে। তবে তাঁরা কেউই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি।
এদিন শুনানির শুরুতেই বর্ধমান-হাওড়া মেনলাইন নিত্যযাত্রী সংগঠনের অন্যতম সদস্য তথা অধ্যাপক শ্রীকান্ত বসুর নেতৃত্বে কয়েকজন একাধিক দাবি নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁদের সেই দাবি শোনেননি কেউই। কারণ হিসেবে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এদিন শুধুমাত্র দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর কথা শোনা হবে। শ্রীকান্তবাবু বলেন, “দুর্ঘটনার সময় আমি ছিলাম না এটা ঠিকই। তবে আমরা বছরখানেক আগেই রেলকে জানিয়েছিলাম ওই ভবনের বাইরের দিকের সংস্কার হলেও ভিতরটা নষ্ট হয়েছে। আমাদের আশঙ্কাকে গুরুত্ব দেয়নি রেল। এই স্টেশনে আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। এসক্যালেটর বসানো হলেও বেশিরভাগ সময় তা বন্ধ থাকছে। শৌচাগার ও জলের সমস্যাও রয়েছে।” যদিও এই সব বিষয় দুর্ঘটনার শুনানির সঙ্গে সম্পর্কিত না হওয়ায় তাঁদের বক্তব্য শোনা হয়নি বলে তিনি জানান।
[আরও পড়ুন: সত্যি হল আশঙ্কা, বাঁকুড়ার জঙ্গলে ঘোরাফেরা করছে বাঘই]
গত শনিবার রাত ৮টা ০৫ থেকে ৮টা ২০ মিনিটের মধ্যে কয়েক দফায় ভেঙে পড়ে মূল প্রবেশ পথের অনুসন্ধান কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকার বারান্দা, পোর্টিকো ও ছাদের একাংশ।
ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন এক জন।
অভিযোগ উঠেছে, ওই এলাকায় সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছিল। কিন্তু সুরক্ষা ও সতর্কতা ব্যবস্থা না নিয়েই কাজ করার ফলে এই বিপত্তি ঘটেছে। যদিও রেল এখনও এই বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে চায়নি। পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শেষ হলে সঠিক কারণ জানা যাবে।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান
The post রেলের ‘গাফিলতি’, বর্ধমান স্টেশন বিপর্যয়ের বয়ান রেকর্ডে অনুপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা appeared first on Sangbad Pratidin.
