সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডের অন্যতম পাণ্ডা গ্রেপ্তার নদিয়ার গেদে সীমান্ত এলাকায়। বাংলা নববর্ষের দিন গেদে এলাকায় হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। দিনভর জেরার পর গ্রেপ্তার করা হল অলোক নাথ নামে ওই ব্যক্তিকে। তার মাধ্যমে তৈরি হওয়া জাল পাসপোর্ট বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছে যেত। সেই কথা প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।

পাসপোর্ট জালিয়াতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)র আধিকারিকরা এদিন রাজ্যের আট জায়গায় হানা দিয়েছিলেন। কলকাতার বেকবাগান থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটি, নদিয়ার গেদে-সহ মোট আট জায়গায় একযোগে তল্লাশি অভিযান চলে। নদিয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা গেদে উত্তরপাড়ায় অলোক নাথের বাড়িতে চলে তল্লাশি। সকাল সাতটা থেকে ১০ ঘণ্টা অভিযান চলার পর গ্রেপ্তার করা হয় ওই ব্যক্তিকে। বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একটি ল্যাপটপ। সেটির মধ্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলেও খবর।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারণে সহজেই এই কারবারের সঙ্গে জড়িয়েছিল ওই ব্যক্তি। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বহু ব্যক্তি ভারতে আসত। অলোক নাথের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ভুয়ো পরিচয়পত্র ও জাল পাসপোর্ট নিয়ে তারা চলে যেত দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বিদেশেও অনেকে পাড়ি জমাত বলে অভিযোগ। অলোকের সঙ্গে আরও একাধিক ব্যক্তি এই কাজে জড়িত বলে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা। এর আগেও এই অলোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে সে জামিনে ছাড়া পায়। তারপরেও আড়ালে আবডালে এই কারবার চালাত বলে অভিযোগ। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এদিন ইডি আধিকারিকরা ওই বাড়িতে হানা দেন। এদিন অভিযানের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ওই বাড়ির আশপাশ ঘিরে রাখে। কাউকেই সেখান দিয়ে যাতায়াত করতে দেওয়া হয়নি।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা এলাকা ঘিরে রাখে। নিজস্ব চিত্র
জাল পাসপোর্ট কেলেঙ্কারির জট খুলতে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই সক্রিয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তদন্তকারীদের বিশেষ নজরে এজেন্টরা, যাদের মাধ্যমে ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করানো হয়েছিল। তাদের সংযোগ কতদূর, তা জানতে মরিয়া তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, গত মাসেই জাল ভুয়ো পাসপোর্ট কাণ্ডের তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দিয়েছিল লালবাজারের গোয়েন্দা দপ্তর। ১৩০ পাতার চার্জশিটে বলা হয়, অভিযুক্ত ১৩০ জনের মধ্যে ১২০ জনই বাংলাদেশি। তাঁদের সকলে এখনও পলাতক। বাকি ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের অন্যতম প্রাক্তন পুলিশ অফিসার আবদুল হাই। এছাড়াও চার্জশিটে নাম ছিল বহুচর্চিত সমরেশ বিশ্বাস ও তাঁর ছেলে রিপন বিশ্বাস-সহ আরও তিনজনের।
এদিকে, ইডিও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই তদন্তকারীদের নজরে তাদের পাসপোর্টগুলি। দেখা যায়, বেশিরভাগই জাল। মোটা টাকার বিনিময়ে সীমান্ত এলাকাগুলিতে ভুয়ো নথি ব্যবহার করে পাসপোর্ট তৈরি হয়েছিল। যেসব এজেন্টরা এই কাজ করতেন, তাঁদেরই মূলত স্ক্যানারের আওতায় এনে তদন্ত শুরু করে ইডি। সম্প্রসারিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকা। হিংসার আগুন জ্বলে ওঠে সুতি, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ানের একাধিক এলাকা। বাইরের থেকে লোকজন এসে বাংলায় হিংসা ছড়ানো হয়েছে। সেই অভিযোগ উঠছে। বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে কি লোকজন এসেছিল? সেই প্রশ্নও উসকে গিয়েছে। সেই আবহের মধ্যেই এবার বাংলায় অভিযান চালায় ইডি। পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে নদিয়ার গেদে থেকে গ্রেপ্তার অন্যতম পাণ্ডা।