সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাফল্য তো চোখে পড়ে সকলের। কিন্তু তার প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো সাফল্যের নেপথ্যে লড়াইয়ের কথা শুনতে চায় ক’জনই বা? অনুসন্ধিৎসু মনের অবশ্য স্বভাব, প্রশ্ন করে খুঁটিনাটি সব কিছু জানার। সেভাবে জানতে গিয়েই হয়ত চোখের সামনে উঠে আসে একটা সাফল্যের পিছনে হাজার হাজার রক্তাক্ত দিনের কাহিনি। এবারের উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary Exam Result) প্রথম স্থানাধিকারী নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের (RKM, Narendrapur) শুভ্রাংশু সর্দারও এমনই অনেক লড়াই পেরিয়ে, শুধুমাত্র বইকে অবলম্বন করেই আজ এই সাফল্যের শীর্ষে উঠে এসেছে। পরিবার তার মোটেই সচ্ছল নয়। বরং কষ্ট করেই দিন চলে। সেখানে দাঁড়িয়েও নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে রয়েছে শুভ্রাংশু।
উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম শুভ্রাংশু এদিন সংবাদামাধ্যমের সামনে বলে, ”আমি যে প্রথম হয়েছি, তার জন্য আমাকে যাঁরা তৈরি করেছেন ছোট থেকে, সকলেরই অবদান আছে। বাবা-মা শিক্ষক এবং অবশ্যই ঈশ্বরের। তবে আমি যেভাবে এগোচ্ছিলাম, তাতে আত্মবিশ্বাস ছিল। বুঝতে পেরেছিলাম, বড় কিছু একটা হবে। এই সাফল্যের কৃতিত্ব তাই আমারও।”
[আরও পড়ুন: ২০০০ টাকার নোটের পাহাড় পরিচালকের বাড়িতে! তুমুল শোরগোল নেটপাড়ায়]
শুভ্রাংশুর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের মহেশতলায় (Maheshtala)। বাবার সবজির বহনের জন্য একটি ছোট গাড়ি আছে, তা ভাড়া দিয়ে কোনওমতে সংসার চলে এই পরিবারের। মা শম্পা সর্দার সেলাইয়ের কাজ করেন। আর্থিকভাবে ততটা সচ্ছল নয়। পঞ্চম শ্রেণি থেকেই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে থেকেই পড়াশোনা করেছে শুভ্রাংশু। ছেলের এহেন সাফল্য নিয়ে মা বলছেন, ”ছেলে প্রচণ্ড বইপোকা। পূজার সময় কেউ টাকাপয়সা দিলে তা জমিয়ে রেখে বই কিনে নিত। সবসময় ও পড়তেই ভালবাসে।” নানা বইয়ের মধ্যে জ্ঞানের আলোই বোধহয় শুভ্রাংশুকে পথ দেখিয়েছিল। তাই তো কঠিন বিষয় নিয়ে পড়েও উচ্চমাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে সে।
[আরও পড়ুন: স্মরণ্য থেকে স্মরণ্যা হয়ে দারুণ সাফল্য, উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় প্রথম রূপান্তরিত ছাত্রী]
শুভ্রাংশুর লক্ষ্য অর্থনীতি (Economics) নিয়ে পড়াশোনা করে গবেষণার রাস্তায় হাঁটা। শুধু পড়াশোনা নয়, অন্যান্য একাধিক ক্ষেত্রে শুভ্রাংশু আগ্রহী এবং সেটাই তার মনের দরজা খুলে দিয়েছে। নিজেকে এবং নিজের চাওয়াপাওয়া নিয়ে লক্ষ্য অত্যন্ত সচেতন। সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্ব সে দিয়েছে স্কুলকে। তার কথায়, ”এই স্কুল তো ছাত্র তৈরি করে না, মানুষ তৈরি করে।” পড়াশোনার বাইরে ‘জোনাকি’ নামে এক ব্যান্ডের লিড সিঙ্গার সে। চন্দ্রিল ভট্টাচার্য তার প্রিয় গায়ক। সাংবাদিকদের অনুরোধে ‘চন্দ্রবিন্দু’ ব্যান্ডেরই গান গেয়ে শোনাল সে – ‘বন্ধু তোমায় এ গান শোনাব বিকেলবেলা।’ আর অনুজদের প্রতি তার বার্তা, ”চাপ নিয়ে কিছু হয় না। যা করবে, ভালবেসে করো, তাতেই সাফল্য বাঁধা।”