রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: বাঘ সুমারি করতে গিয়ে হাতির হামলায় মৃত্যু হল বক্সার হেড ফরেস্ট গার্ডের। শনিবার সকালে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের (Buxa Tiger Reserve Forest) জয়ন্তী রেঞ্জের জঙ্গলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরে মৃতদেহ উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয়রা বনদপ্তরের আধিকারিকদের গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বনদপ্তরের গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথারি পাথরও ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। পাথরের আঘাতে ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার একটি গাড়ির কাঁচ ভেঙে গিয়েছে। জয়ন্তী রেঞ্জ অফিসে পেট্রল জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা। কালচিনি (Kalchini) থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভ সামলে দুপুর দেড়টা নাগাদ মৃতদেহ(Deadbody) উদ্ধার করে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে বনদপ্তর। ঘটনার পর আপাতত বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘ সুমারি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় শনিবার সকাল থেকে জয়ন্তীতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মৃত বনকর্মীর নাম কায়েম আলি মিঞা, বয়স ৫৭ বছর। জয়ন্তী রেঞ্জে হেড ফরেস্ট গার্ড (Forest Guard) হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর বাড়ি বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া কার্তিকা চৌপথি এলাকায়। জানা গিয়েছে, এদিন ভোর সাড়ে ছয়টা নাগাদ বন্দুকধারী ফরেস্ট গার্ড কায়েম আলি মিঞা আরও দুই বনকর্মীকে নিয়ে জয়ন্তীর পুকুরি এলাকায় যান। প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে সুমারির কাজ প্রায় শেষ করেও ফেলেন। সেসময় সকাল সাড়ে নটা নাগাদ আচমকা একটি হাতি মুহূর্তে এসে কায়েম আলিকে আক্রমণ করে। শুঁড়ে তুলে আছাড় মারলে ঘটনাস্থলেই কায়েম আলির মৃত্যু হয়।
[আরও পডু়ন: দলীয় ‘অসন্তোষ’ উড়িয়ে হুগলিতে ফের প্রার্থী লকেট, টিকিট পেলেন সুভাষ-সৌমিত্ররা]
ওই দলে থাকা অন্য দুই বনকর্মী হাতির ভয়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও প্রাণ বাঁচাতে পারলেন না কায়েম আলি। এই ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই বিভিন্ন এলাকা থেকে জয়ন্তী এলাকায় মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। মৃতদেহ উদ্ধার করতে গেলে শুরু হয় বিক্ষোভ, পাথর হামলা জয়ন্তী রেঞ্জ অফিসেও ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলে। মৃত বনকর্মীর পরিবারের লোকেদের অভিযোগ ঘটনার সময় বন্দুক থেকে এক রাউন্ড শূন্যে গুলিও ছোড়ে কায়েম আলি। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ড গুলির ট্রিগার টিপলেও মান্ধাতার আমলের বন্দুক থেকে আর গুলি বের হয়নি। এই সুযোগে হাতি কায়েম আলিকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে ধরে ফেলে। মৃত কায়েম আলির ভাই আবদুল কাদেরের বলেন, “একবারও গুলিও চালিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়বার আর বন্দুক থেকে গুলি বের হয়নি। ফলে এই ঘটনা ঘটল। এত বড় ঘটনার পর বাড়ির লোকদের খবর পর্যন্ত দেয়নি বনদপ্তর। জঙ্গলের ভিতর বনকর্মীদের সামান্য নিরাপত্তার ব্যবস্থাটুকুও করতে পারে না বনদপ্তর।”
[আরও পড়ুন: হুগলিতেই লকেট, দেবের বিরুদ্ধে হিরণ, বাংলার ২০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা বিজেপির]
যদিও গুলিচালনার ঘটনা নিশ্চিত করেনি বনদপ্তর। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পূর্ব বিভাগের উপক্ষেত্র অধিকর্তা দেবাশিস শর্মা বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা একজন দক্ষ ফরেস্ট গার্ডকে হারালাম। ওই ফরেস্ট গার্ডের কাছে বন্দুক ছিল। তিনি গুলি চালিয়েছিলেন কিনা তা তদন্তে উঠে আসবে। আপাতত আমরা এই সুমারি বন্ধ রাখছি। কিছু মানুষ সামান্য সমস্যা তৈরি করেছিলেন। পাথরের আঘাতে আমাদের একটি গাড়ির কাঁচ ভেঙে গিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।” মৃত বনকর্মীর স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
শনিবার থেকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে তৃণভোজী প্রাণী ও বাঘ গণনা শুরু হয়। শনিবার থেকে প্রথম তিনদিন ও পরে শিব রাত্রির পর ১০ মার্চের পর আরো তিনদিন মোট ছদিনে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে এই সুমারি শেষ করার পরিকল্পনা ছিল বনদপ্তরের। তিনজন করে বনকর্মীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এই সুমারির কাজ শুরু করেছিল বনদপ্তর। কিন্তু শুরুর দিনে এই মর্মান্তিক ঘটনায় সুমারি বন্ধ হয়ে গেল।
দেখুন ভিডিও: