ধ্রবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কেরলে সিপিআই-কংগ্রেসের কুস্তির প্রভাবে কি বাংলায় চিরতরে ‘দোস্তি’ হারাবে বাম-কংগ্রেস? চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে দুই শিবিরেই। বাম দলগুলির মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা যেমন চলছে, তেমনই কেরলের ঝগড়ার জল ভবিষ্যতে বাংলার দিকে গড়িয়ে আসবে কিনা, তার ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’-ও চেয়ে পাঠিয়েছে বাংলার এক বাম শরিক দল আরএসপি। কংগ্রেস শিবিরও কার্যত দুভাগে বিভক্ত। তাদের জোটপন্থী শিবিরের মত, ‘এসব ইলেকশন বাবল’। আবার একা লড়াইয়ের পন্থী যারা তাদের প্রশ্ন, ইন্ডিয়া জোটে থেকেও সিপিআই কেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিল?
উপনির্বাচনের প্রচারের শেষ ল্যাপ। রবিবার সেই আবহেই সামনে আসে কেরলের কংগ্রেস নেতৃত্ব সিপিআই আর বিজেপিকে একযোগে কটাক্ষ করে বাম-বিজেপির আঁতাত বলে দুষেছে। সিপিআই আর বিজেপিকে একযোগে কংগ্রেস ‘কমিউনিস্ট জনতা পার্টি (মোদিস্ট)’ বলে বিঁধেছে। বঙ্গে ভবিষ্যতের জোটচর্চা ফের এগোলে তবে কি এই তকমা সেই পথে বাধা হতে পারে? দুই রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষিত পৃথক বলে জানিয়েও ইতিমধ্যে ঘটনা নিয়ে কেরলে তাদের দলের এক রাজ্য কমিটির সদস্যের কাছে স্ট্যাটাস রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন আরএসপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা দলের রাজ্য সম্পাদক তপন হোড়। ২৮ নভেম্বর দিল্লিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সংসদ অভিযান ডেকেছে আরএসপি। তার আগে এই স্ট্যাটাস রিপোর্ট চেয়েছেন তপনবাবু। তাঁর কথায়, “কেরলে কী পরিস্থিতি সেটা জানা দরকার। যদিও ওই রাজ্যের প্রেক্ষিত আলাদা আবার এ রাজ্যের আলাদা।”
যে সিপিআইকে কেরল কংগ্রেসের তোপ, বঙ্গের সেই দলের রাজ্য নেতৃত্ব যদিও বিষয়টিকে প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ। শেষ মুহূর্তের প্রচার সারছেন দলীয় নেতৃত্ব। যদিও বিষয়টি নিয়ে দলে চর্চা রয়েছে। তাদের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এমনটা না হলেই ভাল। এটা অনভিপ্রেত, অস্বাস্থ্যকর। এই বিষয়টা না হলে এই নিয়ে চর্চাও থাকত না।” বঙ্গে জোট ভবিষ্যতের প্রশ্নে তাঁর দাবি, “আমরা শরিক দল লড়াই করবই। সেখানে গণতান্ত্রিক দল হিসাবে কংগ্রেসকেও আমন্ত্রণ জানাবো।” ফরওয়ার্ড ব্লক প্রথম থেকেই এই জোটের পরিপন্থী। তারা বরাবর কংগ্রেসকে এই জোটে রাখার বিরোধিতা করেছে। সিপিএম অবশ্য এসব ঝগড়াকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। প্রাক্তন বিধায়ক তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “দুই রাজ্যের প্রেক্ষিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তো আলাদা। এর কোনও প্রভাব বাংলার জোট ভবিষ্যতে পড়বে বলে মনে হয় না।” এমনকী, বঙ্গে উপনির্বাচন মিটে গেলে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে জোটচর্চা শুরু হওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন সুজন।
সুজনের সুরেই জোট চর্চা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “কেরলে যা হচ্ছে সেসব ইলেকশন বাবল। এমন জিনিস বহুবার আগেও নানা রাজ্যে বা বিশেষ করে কেরলের নির্বাচনে দেখেছি। বঙ্গে এর প্রভাব সেভাবেই নেই।” একলা লড়াইয়ের পক্ষে সওয়াল করে দলকে শক্তিশালী করার প্রেক্ষিতে ছটি কেন্দ্রেই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। তাঁর কথায়, “ইন্ডিয়া জোটে দুটি দলই রয়েছে। আর এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন নয়। তাহলে তো সিপিআইয়ের উচিত ছিল এই নির্বাচনে কেরলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়া।” একইসঙ্গে তঁার বক্তব্য, “প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছিলেন, লড়কি হুঁ, লড় সকতি হুঁ। আর মহিলাদের সম্মানার্থে বলেছিলেন শ্রেণি সংগ্রামের কথা। তার জন্য প্রিয়াঙ্কাকেই সমর্থন করতে পারতেন তাঁরা।”