shono
Advertisement

দুর্ঘটনায় সব শেষ, বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণ করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসল কিশোরী

এ লড়াইকে কুর্নিশ! The post দুর্ঘটনায় সব শেষ, বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণ করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসল কিশোরী appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:01 PM Mar 12, 2018Updated: 12:42 PM Sep 12, 2019

টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: “মেয়ে যতদূর পড়বে, আমি তাকে ততদূর পর্যন্ত পড়াবো”, বলতেন দীপিকার বাবা। কিন্তু “হঠাৎ যে কী হল, এক ঝটকায় সব শেষ হয়ে গেল”– কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন কিশোরীর মা। বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরেই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হল সুবোধ বাউরির। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পড়ে রয়েছে। শোকে কাতর হয়েও বাবার ইচ্ছেকে সম্বল করেই সোমবার নিজের জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষাটি দিলেন বাঁকুড়ার ঝাঁটিপাহাড়ির আনন্দ বাজার গ্রামের বাসিন্দা দীপিকা বাউরি।

Advertisement

চার মেয়ে এক ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল সুবোধ বাউরির। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন তিনি। মাল বোঝাই লরি চালিয়ে সংসার চালাতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর কীভাবে সংসার চলবে? ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াই বা কীভাবে চলবে? বারবার করে চলেছিলেন কল্যাণী বাউরি। নিজে পড়াশোনা না করলেও,  ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাইতেন সুবোধবাবু। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারের নোঙর ঠেলেও স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তাঁর এই স্বপ্নপূরণের একমাত্র ভরসা ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এই মেয়ে দীপিকা।

[মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রের অদূরে যুবকের মৃতদেহ, অভিভাবকদের বিক্ষোভ]

রবিবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সুবোধবাবু। যাওয়ার সময়েও মেয়ে দীপিকার পিঠ চাপড়ে ভাল করে পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাত সাড়ে দশটার নাগাদ হঠাৎ দু’টি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বিশ্বাস হয়নি দীপিকার। “তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল সব। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কিছুই ঠাওর করতে পারছিলাম না।” জীবনের প্রথম পরীক্ষার আগের দিন রাতে বাবাকে চিরতরে হারিয়ে উত্তরপত্র জমা দেওয়ার শেষে মেয়ের আক্ষেপ।

ঝঁটিপাহাড়ি প্রীতি কল্যাণ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী দীপিকা। ছাতনার বাসুলি বিদ্যালয়ে আর পাঁচজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গেই পরীক্ষা দিচ্ছে সে। পাড়ার অন্যান্য মেয়ের সঙ্গে ট্রেকারে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছিল। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে টানা তিন ঘন্টা পরীক্ষা দিয়েছে। চার বোন এক ভাইয়ের সংসারে ওই মেজ দীপিকা। নিজের পরিবারের প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সে।  বড়দির বিয়ে হয়েছে আগেই। সেজ বোন মীনা আর ভাই ইন্দ্রজিৎ এবং ছোট বোন কোয়েল। কাকা মোহন বাউরি বলছেন, দাদা লেখাপড়া না জানলেও ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। দীপিকাই ছিল একমাত্র ভরসা। বাবার মৃতদেহ লাশকাটা ঘরে ময়নাতদন্ত চলার সময়েই মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল পরীক্ষাকেন্দ্রে। মেয়ে বাড়ি ফেরার পরই বাবার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হল শ্মশানে। নিয়ম মেনে করা হল শেষকৃত্য।

ছবি: সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়     

[টেনশনে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা, বরফ-কর্পূর জল খাওয়াবে তৃণমূল]

The post দুর্ঘটনায় সব শেষ, বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণ করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসল কিশোরী appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement