রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: বিদ্যালয়ের প্রার্থনা চলাকালীন ও শ্রেণিকক্ষে রোলকলের সময় বেশ কয়কজন ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে মোবাইলে সেলফি (Selfie) তুলছিল। এই অভিযোগ পাওয়ামাত্রই ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ওই পড়ুয়াদের বের করে দেওয়া হল ক্লাস থেকেও। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখাল দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী। দাবি, নিঃশর্তে তাদের মোবাইলগুলি ফেরত দেওয়া হোক। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার, নদিয়ার (Nadia) তেহট্ট থানার বেতাই উচ্চ বিদ্যালয়ে। সকাল ১১ টা থেকে চলে এই বিক্ষোভ। খবর পাওয়ার পর স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি ও অভিভাবকরা স্কুলে হাজির হন। অবশেষে দেড়টা নাগাদ সভাপতি নিতাইচন্দ্র বিশ্বাস, শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বৈঠক হয়। তাতে ছাত্রছাত্রীরা মুচলেকা দিয়ে মোবাইল ফোন ফেরত পায়।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেতাই উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণির এদিন পরীক্ষার আগে শেষ ক্লাস ছিল। এরপরেই টেস্ট পরীক্ষা শুরু হবে। এমনিতেই স্কুলে মোবাইল (Mobile) নিষিদ্ধ। এদিন বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী স্কুলের শেষ দিন বলে মোবাইল নিয়ে গিয়েছিল। স্কুলে যখন প্রার্থনা হচ্ছিল, সেসময় মোবাইল দিয়ে সেলফি-সহ স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় ছবি তুলছিল। এরপরে ক্লাস শুরু হলে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে, ক্লাস ঘরে তারা ছবি ও সেলফি তুলছিল। এই দেখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক (Head Master)দীপঙ্কর পাল সেই সব মোবাইল কেড়ে নেন। তিনি জানান, প্রত্যেকের অভিভাবককে স্কুলে গিয়ে ফোন নিতে হবে। অনেকের উপস্থিতির হার একদম কম দেখে তিনি রেগে ছাত্রছাত্রীকে ক্লাসের বাইরে বের করে দেন।
[আরও পড়ুন: প্রথা ভেঙে এবার দেরিতে বসছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন, কটাক্ষ বিরোধীদের]
মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ক্লাসের বাইরে বের করে দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা স্কুলের বাইরে এসে স্কুল গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। সেইসঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এই ঘটনার খবর পেয়ে স্কুলে পৌঁছায় পরিচালন সমিতির সদস্যরা, অভিভাবক। তারা ছাত্রছাত্রীদের শান্ত করে গেটের তালা খুলে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সকলকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। সেই আলোচনায় ছাত্রছাত্রীরা মুচলেকা দিয়ে জানায়, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। তারপর তারা মোবাইল ফোন ফেরত পায়।
[আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতিকে ‘অপমান’, অখিল গিরিকে নোটিস জাতীয় মহিলা কমিশনের, পথে বিজেপি]
দ্বাদশ শ্রেণির সৈকত বিশ্বাস, অঙ্কিতা মজুমদাররা বলেন, ”আজ স্কুলের শেষ দিন। এর আগে স্কুলে ফোন নিয়ে গেলে তা কেড়ে নিতেন প্রধান শিক্ষক। তখন তিনি বলেছিলেন যে, শেষ দিন ফোন নিয়ে আসা যাবে। আজ আমরা ফোন নিয়ে এসেছি। তাতেও উনি আমাদের ফোন কেড়ে নিয়েছেন।” তাদের আরও অভিযোগ, ”আমরা যে ঘরে ক্লাস করি সেই ঘরে অত ছাত্রছাত্রীর জায়গা হয় না। অনেকে এই জন্য স্কুলে আসে না। তাদেরকেও এদিন বের করে দেওয়া হয়। আমাদের দাবি, আমাদের মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়া হোক। সেইসঙ্গে আমাদের ক্লাস করতে দেওয়া হোক।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর পালের কথায়, ”স্কুলে মোবাইল নিয়ে আসা নিষেধ। তারপরেও ছাত্রছাত্রীরা মোবাইল নিয়ে এসেছে। সেইসঙ্গে তাঁরা ক্লাস ঘরে ও প্রার্থনার সময় নিজস্বী তুলছিল। সেই কারণে ফোন কেড়ে নিয়েছি। এরপর ছাত্রছাত্রীরা নিঃশর্তে মোবাইল ফেরত চাইলে আমি অভিভাবকদের আসতে বলেছিলাম।”