shono
Advertisement

আজ পুরুলিয়ার জন্মদিন, বঙ্গভুক্তির দাবি ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দাদের

পুরুলিয়ার আছে নিজস্ব ভাষা আন্দোলন এবং তা সফল করতে আইন অমান্যের ইতিহাস। জন্মদিনে ফিরে এল সেই স্মৃতি। The post আজ পুরুলিয়ার জন্মদিন, বঙ্গভুক্তির দাবি ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দাদের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:29 PM Nov 01, 2016Updated: 09:59 AM Nov 01, 2016

সুমিত বিশ্বাস: “শুন বিহারী ভাই/তোরা রাখতে নারবি ভাঙ দেখাই/তোরা আপন তরে ভেদ বাড়ালি/বাংলা ভাষায় দিলি ছাই৷”
পুরুলিয়ার বঙ্গভুক্তি দিবস, ১ নভেম্বর এলেই সাবেক মানভূম তথা পুরুলিয়া লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মানুষজন ক্ষোভ, আক্ষেপে এই টুসুগান আওড়ান৷ মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে সাবেক মানভূমে সেনানীদের আরও উজ্জীবিত করতে এই টুসু গান বাঁধেন লোকসেবক সংঘের সদস্য তথা প্রয়াত সাংসদ ভজহরি মাহাতো৷ এই টুসু গানই ছিল ভাষা আন্দোলনের হাতিয়ার৷ গানের সুরে-সুরে ভাষা আন্দোলন পুরুলিয়ার মানুষজন তাঁদের মাতৃভাষার অধিকার পান৷
১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুরুলিয়ার জন্ম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তি হয়৷ কিন্তু সাবেক মানভূমের একটা বড় অংশ সেই সময় বিহারে থেকে যায়৷ যা বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের অধীনে৷ ফলে বোকারোচাষ, চন্দনকেয়ারি পূর্ব সিংভূমের পটমদা, চাণ্ডিল, ইচাগড়ের বাঙালিদের ১ নভেম্বর এলেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়৷ বাংলায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার যন্ত্রণা তাঁদের কুরে কুরে খায়৷ তাই সাবেক মানভূমের ঝাড়খণ্ডের বাঙালিরা বাংলায় অন্তর্ভুক্ত হতে স্লোগান তোলেন৷ সেই ভাষা আন্দোলনের সেনানী পটমদা থানার কুমিরের বাসিন্দা সর্বেশ্বর মাহাতো বলেন, “তৎকালীন কংগ্রেস সরকার চক্রান্ত করে সাবেক মানভূমের এই অংশকে বিহারে রেখে দেয়৷ তাই আজ ঝাড়খণ্ডের মানুষজন মাতৃভাষার স্বাদ পেতে স্লোগান তোলেন৷”
সাবেক মানভূমে থাকা পুরুলিয়ার বঙ্গে অন্তর্ভুক্তি হলেও এই ভাষা আন্দোলন আজও উপেক্ষিত৷ ৬১তম বঙ্গভুক্তি দিবসেও সরকার পুরুলিয়ার জন্মদিনে কোনও অনুষ্ঠান করে না৷ বাম সরকার ভাষা সেনানীদের সম্মানে যে স্মারক স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করে, তা আজও সম্পূর্ণ হয়নি৷ বঙ্গভুক্তি দিবসের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে গত ২০০৬ সালে পুঞ্চার পাকবিড়রায় এই স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ কিন্তু তা আজ ব্রাত্য হয়েই পড়ে রয়েছে৷ যেমনভাবে ভাষা সেনানীদের অবহেলায়, অর্ধাহারে দিন কাটে, তেমনই একই অবস্থা স্মারকস্তম্ভের৷

Advertisement


ওই আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতেই ভাষা সেনানীরা দাবি তোলেন, ভাষা আন্দোলনের এই ইতিহাস স্কুলপাঠ্যে তুলে ধরতে হবে৷ সেই থেকে গত দশ বছর ধরে ওই দাবিতে স্লোগান তুলে আসছেন মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করা লোকসবেক সংঘ তথা ভাষা সেনানীরা৷ যদিও পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলিতে ইতিহাস বিভাগে পাস কোর্সে ও অনার্সে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে৷ কিন্তু ভাষা সেনানী সুচাঁদ মাহাতো মনে করেন, ‘‘এটা আমাদের কোনওভাবে সন্তুষ্ট করতে করা হয়েছে৷ আমরা চাই স্কুলপাঠ্যে এই ইতিহাস পড়ানো হোক৷”
কারণ, এই জেলার নয়া প্রজন্ম সেভাবে পুরুলিয়ার এই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানেন না৷ মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে ভাষা আন্দোলন যখন জোরদার হচ্ছে সাবেক মানভূমে৷ সেই সময় ১৯৫৬ সালে সীমা কমিশন কেন্দ্রকে রিপোর্ট দেয় সমগ্র মানভূমের মাতৃভাষা বাংলা৷ তার পরেও তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা-বিহারের সঙ্গে কথা বলে দুই রাজ্যের সংযুক্তিকরণের পথে হাঁটেন৷
তার পরই ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল পুঞ্চার পাকবিড়রা গ্রাম থেকে ১০২৫ জন ভাষা সেনানী কলকাতা অভিযান করেন৷ তাঁদের দাবি ছিল সাবেক মানভূমের সমগ্র অংশকে বাংলার অন্তর্ভুক্তি৷ সেই দাবিতে কলকাতার ধর্মতলায় আইন অমান্য হয়৷ পুরুলিয়ার মা হিসাবে পরিচিত লাবণ্যপ্রভা দেবী ও তাঁর স্বামী তথা লোকসেবক সংঘের তৎকালীন সভাপতি অতুলচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে এই পদযাত্রা হয়৷ এই পদযাত্রার পরে ৯ মে আইন অমান্য করে ৯৬৫ জন কারাবরণ করেন৷ তারপরেই জন্ম হয় এই জেলার৷ পুরুলিয়ার বঙ্গভুক্তি হয়৷ সরকার বা প্রশাসনের তরফে এই জন্মদিন পালন না হলেও আজ মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরের ঋষি নিবারণ চন্দ্র মূর্তির পাদদেশে লোকসেবক সংঘ ৬১তম বঙ্গভুক্তি দিবস উদযাপন করবে৷

The post আজ পুরুলিয়ার জন্মদিন, বঙ্গভুক্তির দাবি ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দাদের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement