shono
Advertisement
Jamboni

ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা পশ্চিমাঞ্চলের শুষ্ক মাটিতে সবুজ বিপ্লব! গোবিন্দভোগ চাষে লক্ষ্মীলাভ 'দিদি'দের

চাল প্যাকেটবন্দি করেও লক্ষ্মীলাভ।
Published By: Subhankar PatraPosted: 02:56 PM Jul 03, 2025Updated: 09:10 PM Jul 03, 2025

স্টাফ রিপোর্টার, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম: জমিতে নেমে তাঁরাই তৈরি করেন বীজতলা। রোপন করেন ধান। জমির নিড়ানি, ধান কাটা থেকে ধান ঝাড়া। সবটাই করেন মহিলারা। জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রামের একদা মাওবাদী উপদ্রুত জামবনি ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলারা গোবিন্দভোগ ধানের চাষ করে সুগন্ধি ছড়িয়েছেন বনমহলে। আর তা প্যাকেটবন্দি করে রাজ্যের আনন্দধারা প্রকল্পে নানান গ্রামীণ মেলার মধ্য দিয়ে পৌঁছছে বাংলার বিভিন্ন কোনায়। ফলে যে মহিলারা শুধুমাত্র আমন চাষ করে কাজের অভাবে বর্ধমান এমনকী পেটের টানে বিভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিতেন। তারা এখন সুগন্ধি ধানের চাষ করে এই বনমহলে আক্ষরিক অর্থেই সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছেন। প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বাজারজাতকরণে হচ্ছে লক্ষ্মীলাভও।

Advertisement

কিন্তু এই কাজটা সহজ ছিল না। ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা পশ্চিমাঞ্চলের এই রুখা মাটিতে ওই পিছিয়ে পড়া মহিলাদেরকে একত্রিত করেছে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের রনবহাল গ্রামের একটি আধ্যাত্মিক সংস্থা শময়িতা মঠ। তাদের সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড রুরাল এন্ড ট্রাইবাল ডেভেলপমেন্ট-র আওতায় এই গ্রামীণ উন্নয়নের কাজ চলছে সমগ্র জঙ্গলমহল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম-সহ ওড়িশাতেও। তারাই জামবনীর দিদিদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে উৎপাদক দল বা প্রডিউসার গ্রুপ তৈরি করেন। তাঁরাই মাঠে নেমে গোবিন্দভোগ ধানের সবুজ বিপ্লব ঘটান!

এই ব্লকের মোট ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ধড়সা, পড়িহাটি, কাপগাড়ি, গিধনি, চিল্কিগড় দুবড়াতে একবারই চাষ হয়। লালবাগ ও জামবনিতে ধানের সঙ্গে সরষে হলেও বাকি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে তা হয় না। তাই সেখানকার মহিলারা আমন চাষ শেষ করে ফি বছর পেটের টানে পুবে খাটতে যেতেন। কিন্তু ওই মঠ তাঁদের জীবন যেন বদলে দিয়েছে! বদলে গিয়েছে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। জামবনির বিডিও দেবব্রত জানা বলেন, "এখানকার মহিলারা গোবিন্দভোগের চাষ করে আক্ষরিক অর্থেই নজর কেড়েছেন। তাঁদের কাজ দেখে আরও অন্যান্য মহিলারাও এগিয়ে আসবেন।"

ওই আটটি পঞ্চায়েতের ১৮টি উৎপাদক দলের ৬০০০ মহিলা প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে সুগন্ধী ধানের চাষ করেন প্রায়। স্বর্ণ, ললাট ধান চাষ করে যেখানে তারা কুইন্টাল পিছু ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পান। সেখানে এই সুগন্ধি ধানের চাষ করে প্রতি কুইন্টালে পান ৫ হাজার টাকা। প্রায় ২০টনের বেশি ধান বিক্রি করে গত এক বছরে সাড়ে ৬ লাখ টাকা লক্ষ্মীলাভ করেন। আর এবার স্বপ্ন আরও বড়।

জামবনির মোট ৩০ টি উৎপাদক দল তাদের প্রায়ই মোট ৬০০ থেকে ৭০০ বিঘা জমিতে এই চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। যার কাজ শুরু করে দিয়েছেন গিধনীর শালবনীর দুলালী টুডু, ধড়সার কাপূরমনি মান্ডি। তাঁদের কথায়, "আমরা গোবিন্দভোগ ধান বিক্রি করে যেমন হাতে অর্থ পেয়েছি। তেমনই প্রক্রিয়াকরনের মধ্য দিয়ে গোবিন্দভোগ চাল বিক্রি করে ১০০ টাকা কেজি প্রতি হিসাবে দ্বিগুণ লাভ পেয়েছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখন আমাদের চালের অর্ডার আসছে। অনলাইনেও যাতে বাজারজাতকরণ করা যায় সেই চেষ্টাও চলছে।"

শময়িতা মঠের এক্সিকিউটিভ কৌশিক মুদি বলেন, "২০২৩-২৪ আর্থিক বছর থেকে আমরা এ কাজ করছি। তবে গত বছর থেকে ফলন ভালো হচ্ছে। প্রায় এক বছর ধরে প্রক্রিয়াকরণে দিদিদের হাতে অর্থ এসেছে। এই সুগন্ধি ধান বর্ধমান, খড়গপুরের পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশেও পাঠানো গিয়েছে। এর চাল আনন্দধারা প্রকল্পে গ্রামীণ মেলার মধ্য দিয়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। আর এবার আরও বেশি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ওই দিদিরা মাঠে নামছেন।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • জমিতে নেমে তাঁরাই তৈরি করেন বীজতলা। রোপন করেন ধান। জমির নিড়ানি, ধান কাটা থেকে ধান ঝাড়া। সবটাই করেন মহিলারা।
  • জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রামের মাওবাদী উপদ্রুত জামবনি ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলারা গোবিন্দভোগ ধানের চাষ করে সুগন্ধি ছড়িয়েছেন বনমহলে।
  • প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বাজারজাতকরণে হচ্ছে লক্ষ্মীলাভও।
Advertisement