ধীমান রায়, কাটোয়া: ”ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে এক-একটাকে গুলি করে দেওয়া উচিত। মগের মুলুক পেয়েছো নাকি? এক সপ্তাহের মধ্যে উন্নতি না হলে ধরে ধরে পেটাব পলে রাখলাম।” সরকারি কাজে ঢিলেমির জন্য অধস্তন কর্মচারীদের শাসন করতে গিয়ে এমনই ভাষায় ‘এনকাউন্টার’-এর হুমকি দিয়ে বসলেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও (Joint BDO)। আর তাঁর এহেন আক্রমণাত্মক ভাষায় হুঁশিয়ারির নিয়ে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে পঞ্চায়েতের কর্মীদের মধ্যে। জেলা পঞ্চায়েত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এনিয়ে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অবিলম্বে এই অপমানজনক এবং বেআইনি মন্তব্য প্রত্যাহার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে পঞ্চায়েত কর্মচারী সংগঠন।
লকডাউন পরিস্থিতিতে এমনিতে পঞ্চায়েত-সহ সর্বস্তরে উন্নয়নের কাজ বেশ ব্যাহত হয়েছে। আনলক ১ (Unlock 1) শুরু হতেই প্রশাসনের নির্দেশ, অচলাবস্থা কাটিয়ে দ্রুত পঞ্চায়েতে উন্নয়নমূলক কাজে গতি আনতে হবে। বিশেষ করে ১০০ দিনের প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে শ্রমদিবস বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। মাসখানেক পেরিয়ে গেলেও,
পঞ্চায়েত কর্মীদের কাজে তেমন গতি দেখতে না পেয়ে রীতিমত মেজাজ হারিয়ে ফেললেন কাটোয়ার যুগ্ম বিডিও প্রসূন প্রামাণিক। তাঁর বিরুদ্ধে কর্মীদের গুলি করে মারার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার আ্যসোসিয়েশনের তরফে।
[আরও পড়ুন: সংক্রমণ রুখতে কড়া লকডাউনের সিদ্ধান্ত রাজ্যের, জেনে নিন ছাড় মিলবে কোন কোন ক্ষেত্রে]
পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদকের অভিযোগ, গত ১ জুলাই রাত ১১ টা ১১ নাগাদ পঞ্চায়েত কর্মীদের নিয়ে তৈরি প্রশাসনিক হোয়াসটস অ্যাপ গ্রুপে প্রসুনবাবু ওই ধরনের হুমকি দিয়েছেন। গ্রুপে ওই হুমকি পোস্ট হওয়ার পরেই কর্মচারী মহলে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা কমিটির সম্পাদক বলেন, ”জয়েন্ট বিডিও ওই পোস্ট করার পর অনেকে ভেবেছিলাম, তিনি রাগের মাথায় লিখে ফেলেছেন। পরে হয়ত দুঃখপ্রকাশ করবেন। কিন্তু তারপরেও তিনি লেখেন, যা করেছি ঠিক করেছি। তারপর আমরা জেলা প্রশাসন ও প্রশাসনের উচ্চস্তরে বিষয়টি জানাতে বাধ্য হয়েছি।” শুধুমাত্র ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করানোর হুমকিই নয়, প্রসূনবাবু আরও লিখেছেন, ”সরকার মাইনে দেয় কি হরিনাম সংকীর্তন করার জন্য?”
[আরও পড়ুন: আমফান দুর্নীতিতে এবার কাঠগড়ায় বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত, জনরোষে রণক্ষেত্র গাইঘাটা]
যদিও মঙ্গলবার কাটোয়া ১ জয়েন্ট বিডিও বলেন, ”কাজ করতে গেলে এই ধরনের রাগারাগির কথা হয়েই থাকে। বাস্তবে কেউ কাউকে তো গুলি করে মারছে না।” প্রসূনবাবুর আরও সাফাই, ”জেলার মধ্যে আমাদের ব্লকের পারফরম্যান্স খুব খারাপ। সকলে ঠিকঠাক কাজ করলে এমন হয় না। তাই বকাঝকা করতে গিয়ে যেটুকু করার করেছি। হুমকি দেওয়া মানে এটা নয় যে আমি কাউকে মেরে ফেলব।”
ছবি: জয়ন্ত দাস।
The post ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে গুলি করা উচিত’, কর্মীদের প্রতি BDO-র হুঁশিয়ারিতে তুঙ্গে বিতর্ক appeared first on Sangbad Pratidin.