ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: তিন সঙ্গীর ফাঁসির সাজা হয়েছে। তারও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছিল। দেশদ্রোহিতার মামলায় অভিযুক্ত সে। কিন্তু মামলা চলাকালীনই পুলিশি ঘেরাটোপ ভেঙে চম্পট দেয় দেশের বহু নাশকতার নেপথ্যের খলনায়ক শেখ আবদুল নাইম ওরফে শেখ সমীর। তিন বছর ফেরার থাকার পর সেই লস্কর জঙ্গিকে পাকড়াও করেছেন কেন্দ্রের গোয়েন্দারা। এবার তাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত লস্কর জঙ্গি সমীরকে রাজ্যে এনে সেই অমীমাংসিত বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সিআইডি। শেখ সমীরকে রাজ্যে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা।
[পাসবুক আপডেটেই মিলছে ১ লক্ষ টাকা! জনস্রোত আছড়ে পড়ল ব্যাঙ্কে]
উরির ঘটনার আগেও একবার কাশ্মীরের এক সেনাঘাঁটিতে হামলার ছক কষেছিল লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গিরা। সময়টা ছিল ২০০৭ সাল। শেখ সমীরের সাহায্যে ও নেতৃত্বে বনগাঁর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে রাজ্যে ঢুকেছিল লস্করের আরও তিন জঙ্গি। তবে সে ছক ভেস্তে দিয়েছিল বিএসএফ। গেপ্তার হয় এই দলের মাস্টারমাইন্ড সমীর-সহ দুই পাকিস্তানি মহম্মদ ইউনুস, আবদুল্লা ও এক কাশ্মীর বংশোদ্ভূত জঙ্গি মুজাফফার আহমেদ রাঠের। তদন্তভার যায় সিআইডি-র হাতে। জেহাদের নামে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার অপরাধে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে মহম্মদ ইউনুস, আবদুল্লা ও মুজাফফার আহমেদ রাঠেরকে ফাঁসির সাজা দেয় আদালত। তবে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। কারণ বনগাঁ আদালতে মামলা চলাকালীন ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট অন্য একটি নাশকতার মামলায় সমীরকে মুম্বইয়ের আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে পালিয়ে যায় সে। সাতজন পুলিশকর্মীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ছত্তিশগড়ের খরসিয়া এবং সাক্তি স্টেশনের মাঝে হাওড়া-মুম্বই এক্সপ্রেস থেকে লাফ দেয়। তিন বছর ফেরার থাকার পর চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর লখনউয়ের চারবাঘ বাসস্ট্যান্ড থেকে সমীরকে গ্রেপ্তার করেন অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড ও এনআইএ-র গোয়েন্দারা।
[ছুটিতে দিঘার হোটেলের ভাড়া আকাশছোঁয়া, কোন চক্র সক্রিয় জানেন?]
মহারাষ্ট্রের অওরঙ্গাবাদের বাসিন্দা শেখ আবদুল নাইম ওরফে শেখ সমীর। গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা যায়, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তেই পাকিস্তানে গিয়ে লস্করের থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে স্লিপার সেলের কাজ করত। সমীরের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণ, দেশে লস্কর—ই তৈবার পাঠানো অস্ত্র ঢোকানো-সহ বেশ কিছু নাশকতার অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর, ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে কলকাতার মদনমোহন বর্মন স্ট্রিটে লস্করের স্লিপার সেলের সন্ধান পান সিআইডি-র গোয়েন্দারা। ওই গোপন ডেরায় হানা দিয়ে প্রচুর পরিমাণ তরল বিস্ফোরক নাইট্রোগ্লিসারিন-সহ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়। ওই চার জঙ্গির ব্রেন ম্যাপিং, পলিগ্রাফ ও নারকো অ্যানালাইসিস টেস্ট করা হয়৷ সেই সময় সমীর সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে । সমীর জানায়, লস্কর-ই-তৈবাতে কম্যান্ডার র্যাঙ্ক ছিল তার৷ কীভাবে জঙ্গিরা দেশে ঢুকবে, কোথায় বিস্ফোরক মজুত করা থাকবে, কীভাবে হামলা চালানো হবে, এসবের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করাই তার কাজ ছিল।
[মুক্তি পেয়েই আমেরিকা ও ইজরায়েলকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি হাফিজের]
সশস্ত্র লড়াইয়ে যেমন পারদর্শী, তেমনই মেধাবী সমীর। বনগাঁ আদালত সূত্রে খবর, জেলে বসে রাতভর আইনের বই পড়ত। আইনজীবীর সঙ্গে নিজেও মামলায় সওয়াল করত। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী জানান, বিচারপর্ব চলাকালীন সমীরের সওয়ালে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যেতেন সরকারি আইনজীবীরাও। সমীরের পুনরায় গ্রেফতারির পর স্বাভাবিকভাবেই নিষ্পত্তি না হওয়া মামলাটি আবার শুরু হতে চলেছে। আইনজীবীদের মত, আইন অনুযায়ী বিচারাধীন কোনও বন্দি ফেরার থাকলেও মামলাটি বহাল থাকে। সমীরকে আদালতে পেশ করে ফের সেই মামলা শুরু করার তোড়জোড় শুরু করেছে সিআইডি-ও। সিআইডি—র ডিআইডি (অপারেশন) নিশাত পারভেজ বলেন, “সমীরকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।” দেশবিরোধী এই সন্ত্রাসবাদীকেও সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার দাবি তুলছেন সাধারণ মানুষ।
[বেলেল্লাপনায় ছাড় নেই মহিলাদেরও, বড়দিন-বর্ষবরণে সক্রিয় পুলিশ]
The post ধৃত লস্কর জঙ্গি সমীরকে রাজ্যে আনার প্রক্রিয়া শুরু সিআইডির appeared first on Sangbad Pratidin.
