সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক থেকে পালিয়ে গেল এক পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী লেপার্ড (Leopard)। আর তাতে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে ঝাড়গ্রাম শহর-সহ জু সংলগ্ন এলাকায়। ইতিমধ্যে এলাকায় ঝাড়গ্রাম পুলিশের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের সতর্ক করতে শুরু হয়েছে মাইকিং। শহর-সহ জু লাগোয়া এলাকায় দায়িত্ব থাকা সিভিক ভলেন্টিয়ারদের ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা মিনি জু থেকে চিতাবাঘ পালিয়ে যাওয়ার খবর জানাজানি হতেই তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হতেই শহরের রাস্তাঘটা শুনশান হয়ে যায়। স্থানীয় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। তবে কীভাবে চিতাবাঘটি পালাল, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। এদিন সন্ধের পর জানাজানি হওয়ায় ঝাড়গ্রাম (Jhargram) জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক থেকে একটি চিতাবাঘ তথা লেপার্ড পালিয়েছ। বনদপ্তরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, চারটি বাঘের মধ্যে একটিমাত্র স্ত্রী চিতাবাঘ রয়েছে, তার নাম হর্ষিণী। সেই বাঘটিই পালিয়েছে।
[আরও পড়ুন: নাই বা থাকল চোখ, এবার পুজোয় কান দিয়ে ঠাকুর দেখবেন দৃষ্টিহীনরা]
সন্ধের পর জু কর্তৃপক্ষের নজরে আসে বিষয়টি। এই ঘটনার পরেই বাঘের খাঁচার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ ফেন্সিংগুলির (Fencing) আদৌ কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হত না। ফেনসিং টপকেই স্ত্রী বাঘটি পালিয়েছে বলে একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, লেপার্ডগুলি যেখানে থাকে সেখানে উপরের দিকেও থাকে ইলেকট্রিক ফেনসিং। সেই ইলেকট্রিক ফেনসিংয়ের চার্জিং নিয়মিত হত না বলেই জানা গিয়েছে। বাঘগুলিতে নিয়মিত নজরদারি করার জন্য আদৌ সিসিটিভি (CCTV) ছিল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।সব মিলিয়ে বাঘ পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় রীতিমত কাঠ গোড়ায় বনদপ্তর।
বিষয়টি নিয়ে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “বনদপ্তরের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পরেই আমরা লাগোয়া এলাকাগুলিতে মাইকিং শুরু করেছি। মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।” ঝাড়গ্রাম শহর থেকে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক প্রায় তিন কিলোমিটার ধ্বনি বিটের মধ্যে পড়ে। জু’র পাঁচশো মিটারের মধ্যে রয়ছে ঝাড়গ্রাম পুলিশ লাইন। আবার জু’র একদিকে বাঁধগোড়া অঞ্চলের খানাকুল এবং অপরদিকে রয়েছে ঝাড়গ্রাম পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড। এই এলাকা জঙ্গলে ঘেরা। সবমিলিয়ে তীব্র আতঙ্ক শহর এবং ওই এলাকায়।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালে, উত্তরবঙ্গ থেকে প্রথম ঝাড়গ্রাম জুতে এসেছিল সোহেল নামে একটি পুরুষ লেপার্ড। তার প্রায় দু’বছর পরে ২০১৯ সালেন উত্তরবঙ্গের খয়েরবনি থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল স্ত্রী বাঘ হর্ষিণীকে। বছর খানের আগে এদের দুজনের মিলনে দুটি পুরুষ শাবকের জন্ম হয় জুতে। বর্তমানে দুটি শাবকই সাবালক। এদের বয়স ন’মাসের বেশি। সোহেলকে আলাদা রাখা হয়। হর্ষিণী এবং দুটি পুরুষ লেপার্ড একই ফেনসিংয়ে থাকত বলে জানা গিয়েছে। এদিকে এই ঘটনার পরেই কেন বনদপ্তর স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্রুত খবরটি জানানো হয়নি, তা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা।
[আরও পড়ুন: সমকামী সম্পর্কের জেরে রেলকর্মীকে খুনের সাজা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ২ জনের]
ঝাড়গ্রাম বনদপ্তরের প্রাক্তন বনাধিকারিক সমীর মজুমদার বলেন, “চিতাবাঘ রাখার জন্য যে ফেনসিংগুলি করা হয়েছিল সেই প্ল্যানিংয়ে ছিল গাফিলতি। সেই সময় বিষয়টি আমি কতৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম। ফেনসিংগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হত না। নজরদারির অভাব ছিল। সিসিটিভিও রাখা দরকার নজরদারির জন্য। সবমিলিয়ে গাফিলতির জন্যই এদিন চিতাবাঘটি পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।” এদিন এই বিষয়টি নিয়ে জানতে ঝাড়গ্রামের ডিএফও শেক ফরিদকে বারবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি বা মেসেজের উত্তর দেননি। এই বিষয়ে রাজ্য বনদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “ডিএফওর সঙ্গে কথা হয়েছে। কীভাবে বাঘটি পালাল, তা নিয়ে তদন্ত হবে। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপারের সঙ্গেও কথা হয়েছে।”
This browser does not support the video element.