সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আর কিছুদিনের অপেক্ষা। এবার পায়ে হেঁটেই পুরুলিয়ায় চিতাবাঘ দর্শন! শহর পুরুলিয়ার উপকণ্ঠে সুরুলিয়া মিনি জুতে আরও বেশি করে পর্যটক টানতে বেঙ্গল সাফারি থেকে চিতাবাঘ 'জ্যাকি'-কে নিয়ে আসছে কংসাবতী উত্তর বনবিভাগ। প্রাথমিক কথাবার্তা শেষ। সুরুলিয়াতে সমস্ত পরিকাঠামোও তৈরি। ফলে শুধুমাত্র সবুজ সংকেতের অপেক্ষা। ওই চিতাবাঘ যাতে সুরুলিয়ার মিনি চিড়িয়াখানার এনক্লোজারে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে তাই লক্ষ্মীবারে তা ঘুরে দেখবেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী। তাই কয়েকদিন ধরেই এনক্লোজারকে সাজানো গোছানোর কাজ চলছে। তবে এই বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছে না কংসাবতী উত্তর বনবিভাগ।
আসলে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার যে অবসান হতে চলেছে। তাই এই পর্বে কোনরকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না বনদপ্তর। সুদূর শিলিগুড়ির সালুগাড়ায় বেঙ্গল সাফারি থেকে একেবারেই নির্ঝঞ্ঝাট 'জ্যাকি'কে এখানে নিয়ে আসাই এখন প্রধান লক্ষ্য সুরুলিয়ার মিনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। তাই এই চিড়িয়াখানা দেখভাল করা কংসাবতী উত্তর বনবিভাগ চিতাবাঘের আগমনকে ঘিরে খুবই সাবধানী। ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরি বলেন, "সমস্ত কিছু চূড়ান্ত করতে একটু সময় লাগছে। শীঘ্রই সুরুলিয়ার মিনি জু'তে চিতাবাঘ আসবে।" চিতাবাঘ ছাড়াও আসছে বিদেশি রঙবাহারি একাধিক ম্যাকাও। কলকাতার হরিণালয় মিনি জু থেকে ওই 'স্বপ্নের পাখি' বা 'ড্রিম বার্ড'কে নিয়ে আসা হচ্ছে।
সাজছে পুরুলিয়ার মিনি জু। ছবি: অমিতলাল সিং দেও
[আরও পড়ুন: অশান্তির আশঙ্কা, অনুমতি দিয়েও রামনবমী পালনের নির্দেশ প্রত্যাহার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে]
বেঙ্গল সাফারি থেকে সেখানকার জনপ্রিয় 'জ্যাকি'কে কিভাবে নিয়ে আসা হবে তা এখনও চূড়ান্ত করেনি ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটি। এই প্রখর দাবদাহে সাড়ে তিন বছরের জ্যাকির যাতে কোনরকম ধকল না হয় সেই বিষয়টি বারে বারে খতিয়ে দেখছে রাজ্যের জু কর্তৃপক্ষ। ওই পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘকে মিনি জু তে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকদের দর্শনের জন্য তাকে সামনে আনা হবে না। তাকে বেশ কিছুদিন 'অফ ডিসপ্লে'-তে রেখে তবেই পাকাপাকিভাবে এনক্লোজারে আনা হবে।
চিতাবাঘের এনক্লোজার সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। ছবি: অমিতলাল সিং দেও
ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির সদস্য সচিব এই চিড়িয়াখানায় পা দেওয়ার আগে বুধবার সন্ধ্যার মুখে চিতাবাঘের এনক্লোজার পরিদর্শন করে দেখেন কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের এডিএফও পূরবী মাহাতো। চিতাবাঘের জন্য এই এনক্লোজার অনেকদিন আগেই তৈরি হয়েছিল। সেখানে ঝোপঝাড়ে ভর্তি হয়ে যায়। কয়েক দিন ধরে তা পরিষ্কার করে একেবারে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এনক্লোজারের মধ্যেই রয়েছে চিতাবাঘের জলকেলির জন্য ওয়ালো পুল। সেই সঙ্গে জল খাওয়ার ব্যবস্থা। দুটি আচ্ছাদন। চিতাবাঘ মগডালে বসে তাই কৃত্রিমভাবে গাছের ডালও তৈরি করা হয়েছে। এই চিতাবাঘ বা লেপার্ড দর্শনে দর্শকদের যাতে কোনরকম ঝুঁকি না হয় তাই দ্বিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় রয়েছে।
সাজছে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে সুরুলিয়া মিনি জু। ছবি: অমিতলাল সিং দেও
প্রথম পর্যায়ে এনক্লোজারের জাল। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ে বৈদ্যুতিক তারের ফেন্সিং। এনক্লোজারের ভেতরেই রয়েছে ক্রল, চিকিৎসার জন্য স্কুইজ কেজ। এছাড়া চারটি নাইট সেল্টার। পুরুষ চিতাবাঘ 'জ্যাকি'র যাতে নতুন পরিবেশে মনখারাপ না হয় তাই আগামী দিনে তার সঙ্গীকেও নিয়ে আসা হবে। সবকিছু মাথায় রেখেই এনক্লোজারকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এই চিতাবাঘের সঙ্গে মন ভোলানো লাখ টাকার পাখি রঙবাহারি ম্যাকাও যে আলাদা নজর কাড়বে সে কথা বলছে ওই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ওই বিদেশি পাখির জন্যও সাজানো হচ্ছে বড়সড় খাঁচা। ওই পাখি যেহেতু খেলতে ভালোবাসে তাই বড় খাঁচার মধ্যে নানা খেলার সরঞ্জামও থাকছে।
চিতাবাঘ দর্শনে যাতে কোনরকম ঝুঁকি না হয় তাই দ্বিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়। ছবি: অমিতলাল সিং দেও