shono
Advertisement
CPM

মাঠে ময়দানে কাজ করেও মার্কশিটে 'জিরো', শূন্যতত্ত্ব নিয়ে কী বলছে তরুণ বাম প্রার্থীরা?

সৃজন, সায়ন, দীপ্সিতা, প্রতীক-উরদের হাত ধরে খরা কাটানোর স্বপ্ন দেখছিল লাল পার্টি।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 06:56 PM Jun 05, 2024Updated: 09:16 PM Jun 05, 2024

রমেন দাস: শূন্য থেকে শুরু। এই কথাটা বোধহয় জীবনের সর্বস্তরেই কমবেশি প্রযোজ্য। রাজনীতিও তার ব্যতিক্রম নয়। নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর বাম শিবিরের 'শূন্য'তা সেই বোধেরই জন্ম দিয়েছে নতুন করে। চব্বিশের ভোটে বাংলার ৪২ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটিতেও জিততে পারেননি সিপিএম প্রার্থীরা। এমনকী দ্বিতীয় নয়, তৃতীয় স্থানে তাঁরা। মাঠে-ময়দানে ঝাঁপিয়ে কাজকর্ম, শিকড় থেকে জনসংযোগের পরও জনতা ফেরাল বামেদের। এমনকী তরুণ ব্রিগেডকে ভোটযুদ্ধের ময়দানে নামিয়েও সুফল পায়নি লাল পার্টি। কিন্তু হতাশা নয়, শূন্য থেকে শুরু করতে চান তাঁরা।

Advertisement

বাম শিবিরে একটি কথা খুব প্রচলিত - জয়ে যারা আত্মহারা এবং পরাজয়ে যারা ভেঙে পড়ে, তারা কেউ কমরেড নন। সেই বিশ্বাসই আরও দৃঢ়ভাবে চাড়িয়ে যাচ্ছে তরুণ সিপিএম (CPM) নেতানেত্রীদের মধ্যে। জনরায়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর সকলেই স্বীকার করছেন, ''জনতার কাছে যেতে পারিনি। শূন্য থেকে ঝাঁপাব। মানুষের কাছেই আবার ফিরে যাব।'' এবারের লোকসভা ভোটে জেতার আশা দেখিয়েছিলেন যাদবপুরের (Jadavpur) প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য। কিন্তু তিনিও তৃতীয় স্থানে। তবে হারের প্রতিফলন তাঁর আত্মবিশ্বাস বা কণ্ঠস্বরে নেই। বরাবরের মতো স্থিতধী সৃজন (Srijan Bhattacharya) বলছেন, ''জয় বা হার নিয়ে আর ভাবার কিছু নেই। বাস্তবের মাটিতে আমাদের কাজ করতে হবে। তবে গত পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোটে তৃণমূল-বিজেপির দ্বিমুখী লড়াই যেভাবে আমরা ভাঙতে সক্ষম হয়েছিলাম, এই নির্বাচনে তা আর হল না। আমাদের ভাষ্য নিয়ে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছতে পারলাম না। আমরা বলেছিলাম রুজিরুটির কথা। মানুষের কাছে সেসব নিয়েই আবার আমরা যাব। একেবারে শূন্য থেকে ঝাঁপাব।''

প্রচারে যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য।

এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক প্রতীক-উর রহমান এবারের লোকসভা ভোটে লড়াই করেছিলেন বেশ কঠিন আসনে, ডায়মন্ড হারবার (Diamond Harbour)। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতীক-উর বরাবরই বলেছিলেন, ডায়মন্ড হারবারের মানুষ যদি ভালোভাবে ভোট দিতে পারেন, তাহলে ফলাফল একেবারে অন্যরকম হবে। ভোটের ফলপ্রকাশের পরও প্রতীক তাঁর সেই বক্তব্যেই স্থির। এবারও তিনি বললেন, ''আগেও বলেছিলাম, এখনও বলছি। ডায়মন্ড হারবারে ঠিকমতো ভোট হয়নি। মানুষ ভোট দিতে পারেননি। ১২০০ বুথে ভোট লুট হয়েছে। সেদিন কমিশনে আমরা ৪৫০ অভিযোগ দায়ের করেছি, কিন্তু ঠিকমতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।''

[আরও পড়ুন: লোকসভায় নজরকাড়া ফল হেভিওয়েট মহিলা প্রার্থীদের, হারলেন শুধু স্মৃতি

হার নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মতামত দিলেন আরেক হেভিওয়েট কেন্দ্র তমলুকের (Tomluk) সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ''জয়ের সম্ভাবনা দেখে মানুষ ভোট দিয়েছেন, এটাই ফ্যাক্টর। আমরা যখন জনসভা, প্রচার করেছিলাম, তখন তো জনসমর্থন ভালো পেয়েছি। কিন্তু ভোট দেওয়ার আগে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, ভোট যাঁকে দেব, তিনি জিতবেন তো? আর সেই মাপকাঠিতে আমরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারিনি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।''

তমলুকের সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়।

শ্রীরামপুরের (Serampore) সিপিএম প্রার্থী, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী দীপ্সিতা ধর। তিনিও হারের মুখ দেখেছেন। বললেন, ''আমার কোনও অভিযোগ, অভিমান নেই। যাঁরা আমাদের দিকে হাত বাড়িয়েছেন, তাঁরা আমাদের ভোট দিয়েছেন, সেটাই বিশ্বাস করি। আমাদের ভোট ৬ শতাংশ বেড়েছে। কেন বাকিরা দিলেন না, তা ভাবতে হবে, বিশ্লেষণ করতে হবে। কোথাও কোথাও পঞ্চায়েত বা বিধানসভার তুলনায় ভোট কমেছে। সেটাও দেখতে হবে। তবে আমরা আবার মানুষের কাছে ফিরে যাব।''

শ্রীরামপুরের পথে প্রচারে দীপ্সিতা ধর।

[আরও পড়ুন: জয়ের পর মোদিকে অভিনন্দন, একত্রে পথ চলার বার্তা ‘শত্রু’ মুইজ্জুর]

দীপ্সিতার পাশের কেন্দ্র হাওড়া (Howrah) থেকে সিপিএমের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। হার নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ''আমরা মানুষের কাছে যে বিষয় নিয়ে গিয়েছিলাম, তৃণমূল-বিজেপিকে হারাতে হবে। সেটা মানুষ শোনেননি। তবে আমাদের প্রচারের কিছুটা প্রতিফলন তো হয়েইছে। আমি প্রায় ১ লক্ষ ৫২ হাজার ভোট পেয়েছি। জয়-পরাজয় তো একটা অঙ্কমাত্র। মানুষের সমর্থন তো পেলাম। তবে এই ফলাফল মানতে হবে। মানুষের কাছে যাতে ভরসার যোগ্য হয়ে উঠতে পারি, সেই চেষ্টা করব।'' এসবের পরও অবশ্য তাঁদের দ্বিতীয় স্থানচ্যুত হওয়ার ব্যাখ্যা মিলছে না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বামেদের রক্তক্ষরণ অব্যাহত, লোকসভায় শূন্য হাতে ফিরলেন প্রার্থীরা।
  • সৃজন, সায়ন, দীপ্সিতা, প্রতীক-উরদের হাত ধরে খরা কাটানোর স্বপ্ন দেখছিল লাল পার্টি।
  • ব্যর্থতা মেনে তাঁরা বলছেন, 'মানুষের কাছে পৌঁছতে পারিনি।'
Advertisement