shono
Advertisement

চিকিৎসার খরচ আকাশছোঁয়া, কোভিড আক্রান্ত অভাবী ডাক্তারের পাশে মমতা

টানা ১০ দিন হাসপাতালে থাকার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার পথে কোয়েল।
Posted: 02:08 PM May 29, 2021Updated: 02:08 PM May 29, 2021

অভিরূপ দাশ: মা গৃহবধূ। বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। তাঁদেরই কোভিড (Covid-19) আক্রান্ত মেয়ের হাসপাতালে প্রথমদিনের বিল ২ লক্ষ! কি করে মেটাবে সম্বলহীন পরিবার? মুশকিল আসান হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। পশ্চিমবঙ্গ সরকার (West Bengal Govt.) নিল চিকিৎসার দায়িত্ব। গোটা ঘটনায় সেতুবন্ধনের কাজ করেছে ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম (West Bengal Doctors Forum)। তাদেরই সহায়তায় রাজ্য সরকার নিল কোয়েলের করোনা চিকিৎসার ভার।

Advertisement

ডাক্তারি পাশ করে সবে হাত পাকাতে শুরু করেছে দুই বোন। মোনালিসা আর কোয়েল। কোভিড রোগীতে থিকথিক শম্ভুনাথ পণ্ডিতে ইন্টার্নশিপ করছিলেন কোয়েল। অগুনতি রোগী দেখতে হচ্ছিল তাঁকে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ জ্বর । টেস্ট করাতে টের পাওয়া যায় ফুসফুসে নোঙর ফেলেছে ভাইরাস। প্রাথমিক অবস্থায় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালেই ভরতি করা হয় কোয়েলকে। অক্সিজেন নামছিল হুড়মুড় করে। বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশনে রেখেও স্যাচুরেশন ৯০ ছুঁচ্ছিল না। তবে উপায়? দিদি মোনালিসা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস। তাঁর কথায়, “বোনকে নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসছিল ও।” তবে কি সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশন-এ দিতে হবে? মোনালিসার বক্তব্য, সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশন থেকে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল থেকে কোয়েলকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা শুরু করে পরিবার। প্রশ্ন ওঠে, বেড পাওয়া যাবে কি? এই মুহূর্তে বাংলায় রোগীর চাপ মারাত্মক।

[আরও পড়ুন: রাজনীতির ঊর্ধ্বে মানবতা, করোনা আক্রান্ত বিজেপি কর্মীর বাবার দেহ সৎকার করলেন তৃণমূল নেতা]

সুরাহা খুঁজতে যোগাযোগ করা হয় ডা. কৌশিক চাকির সঙ্গে। মাইতি পরিবারের কাছে ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আপাতত ঈশ্বর। ডা. চাকির কথায়, চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখে রোগী দেখছেন। অগুনতি চিকিৎসক রোগী দেখতে গিয়ে মারা গিয়েছেন। আমি নিজে একজন চিকিৎসক হয়ে অন্যের বেদনায় পাশে দাঁড়াব না? ডা. চাকিকে মাইতি পরিবার জানায়, তাঁরা কোয়েলকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভরতি করতে চায়। প্রথমে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেখানে বেড খালি ছিল না। পরে ফুসফুসরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুস্মিতা রায়চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পাশে দাঁড়ান। বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায় বেড।

তারপর? গুরুতর অসুস্থ কোয়েল। ২৪ ঘন্টার অক্সিজেন সাপোর্ট তো বটেই তাঁকে সুস্থ কর‍তে প্রয়োজন ছিল বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশনের। পঞ্চাশ হাজার টাকা ডিপোজিট করতে হয়েছিল ভরতির দিনেই। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, গুরুতর অসুস্থ কোয়েলের চিকিৎসায় খরচ বিপুল। ইন্ট্রা মাসকুলার যে ইঞ্জেকশন তাঁর প্রয়োজন তার এক একটার দাম আকাশছোঁয়া। ভরতির প্রথম ২৪ ঘন্টাতেই খরচ হয় দু’লক্ষ। খরচের সংস্থান না হলে মাইতি পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা চালানো অসম্ভব ছিল। বুঝতে পেরেছিলেন ডা. কৌশিক চাকি। অবিলম্বে যোগাযোগ করা করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের সঙ্গে। তিনিই আশ্বাস দেন কোয়েলের চিকিৎসার ভার নেবে রাজ্য সরকার। টানা ১০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোয়েল। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মাইতি পরিবার। মোনালিসা বলেছে, কৌশিক স্যার না থাকলে আমরা বাঁচাতে পারতাম না বোনকে।

[আরও পড়ুন: নিউ বারাকপুরের অগ্নিদগ্ধ কারখানার ভিতর থেকে উদ্ধর নিখোঁজ ৪ শ্রমিকের ঝলসানো দেহ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement