সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিধায়কের কাছ থেকে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট মেলেনি। তাই সোশ্যাল সাইটে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন এক সমাজসেবী। আর তা নজরে পড়তেই তাঁর নিরাপত্তায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে গিয়ে প্রতিবাদীর দোকান ভাঙচুর করে তাঁকে মারধর করার অভিযোগ উঠল বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে পুরুলিয়া শহরের সাহেব বাঁধ রোডে পুরুলিয়ার গেরুয়া বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীকে এই মারধরের অভিযোগ ওঠে।
মারধরের পর ওই প্রতিবাদী ব্যবসায়ী ফেসবুক লাইভ করতেই বিধায়কের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে পুরুলিয়া শহরজুড়ে। এই ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে পুরুলিয়া সদর থানায় অভিযোগ করেন প্রতিবাদী ব্যবসায়ী তুষার অবস্থি। বিধায়ক ছাড়াও পুরুলিয়া শহরের দু’নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দীপক বাউরি, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজেশ মণ্ডল-সহ অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, সুনির্দিষ্ট মামলা রুজু করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া নিতে এদিন বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। মেসেজ করলেও সাড়া মেলেনি।
[আরও পড়ুন: প্রতারণার পর্দাফাঁস, কলকাতায় তিনটি ভুয়ো কল সেন্টার থেকে সিআইডি’র জালে ২০ জন]
পুরুলিয়ার (Purulia) ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ধুনিয়া পাড়ার বাসিন্দা এই তুষার অবস্থি। পুরুলিয়া পুর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডে অনলাইন পয়েন্ট নামে তাঁর একটি অনলাইন সংক্রান্ত পরিষেবা কেন্দ্র থাকলেও আদতে তিনি এই জেলায় সমাজসেবী হিসেবেই পরিচিত। তবে বর্তমানে তিনি তৃণমূল সমর্থক। যদিও আগে তিনি বজরং দলের সদস্য থাকার পাশাপাশি জেলা বিজেপির সোশ্যাল সাইটে কাজ করতেন। তাঁর কথায়, “আমি বৃহস্পতিবার সকালের দিকে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেটের জন্য পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়কে ফোন করি। এই সার্টিফিকেটের কথা শুনে তিনি জানিয়ে দেন, তা মিলবে না। আমি এখন বাইরে আছি। এরপরে আমি তাঁকে বলি, আপনি যদি কলকাতায় সবসময় থাকেন তাহলে শহরের মানুষ কী করে পরিষেবা পাবেন? এই বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।” তুষার আরও জানান, এরপর গোটা বিষয়টি সোশ্যাল সাইটে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন তিনি। তাঁর কথায়, “ওই দিন রাতেই ওই বিধায়ক তাঁর নিরাপত্তায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ানদের নিয়ে এসে আমার দোকানে ঢুকে আমাকে মারধর করে এবং দোকান ভাঙচুর করে দেয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দু’জন আমাকে ধরে থাকে এবং বিধায়ক আমাকে মারধর করেন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন।”
পুরুলিয়া সদর থানায় করা অভিযোগে তুষার লিখেছেন, বিধায়ক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তাঁকে। তিনি বলতে থাকেন, ‘দাদার সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। আজ শেষ কর, বাকি সব দিল্লি থেকে দেখে নেবে।’ কে এই দাদা, তা পুলিশকে তদন্ত করে দেখার আরজি জানিয়েছেন তুষার।
[আরও পড়ুন: তাজমহলের গোপন কক্ষে কোনও হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ছিল না, বিতর্কে জল ঢেলে জানাল ASI]
করোনা কালে (Corona Pandemic) অক্সিজেন ও খাবার বিলি করে জেলার মানুষের মন জয় করেছিলেন ‘প্রতিবাদী’ তুষার। তাছাড়া তিনি সবসময় সর্বস্তরের মানুষের জন্য কাজ করে থাকেন। ‘পাশে আছি’ বলে একটি সংগঠনও চালান। এই ঘটনায় পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিধায়ক পুরুলিয়া শহরের মানুষজনকে পরিষেবা দিতে না পেরে মেজাজ হারিয়ে মারধর করছেন। বিধায়কের এমন কাজকে ধিক্কার জানাই। সাধারণ মানুষ সব কিছু দেখেছেন। তিনি বিধায়ক হলেও আর তাঁর প্রতি মানুষের সমর্থন নেই। তিনি পুর ভোটে হেরে গিয়েছেন।”