রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে অতর্কিত হামলায় নিহত যুবক। তার গলার নলি কেটে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এবং তার নেপথ্যে রয়েছে স্ত্রীর প্রথম স্বামী! সাতসকালে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে। পরিবার সূত্রে খবর, গোপনে পাড়ার এক গৃহবধূকে বিয়ে করেছিল মৃত যুবক। প্রতিশোধ নিতে তার প্রথম স্বামী এই খুন করেছে বলে অভিযোগ। মৃতদেহ উদ্ধার করে খুনিকে নাগালে পেতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, পটাশপুরের পঁচেট গ্রামের বাসিন্দা মৃত যুবকের নাম দীপঙ্কর গিরি। বয়স ৩৫ বছর। বছর চারেক আগে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু প্রথম স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। এর পর পাশের পাড়ার এক গৃহবধূর সঙ্গে দীপঙ্করের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। গৃহবধূর এক শিশু সন্তান-সহ তাঁকে গোপনে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন দীপঙ্কর। অভিযোগ, গৃহবধূর প্রথম পক্ষের স্বামী তা জানামাত্র দীপঙ্করকে মারধর খুনের হুমকি দেন। বার বার স্ত্রী ও সন্তানকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েন প্রথম স্বামী। কিন্তু গৃহবধূ দীপঙ্করকে ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেন। অভিযোগ, সেই রাগে গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূর বর্তমান স্বামী অর্থাৎ দীপঙ্কর গিরির গলার নলি কেটে খুন করেছে প্রথম স্বামী।
এমন মর্মান্তিক ঘটনার পর কাঁদতে কাঁদতে পরিস্থিতি সম্পর্কে বলছিলেন গৃহবধূ। ঘটনার দিন রাতে তিনি দাঁতের যন্ত্রণার জন্য ওষুধ খেয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত প্রায় আড়াইটা নাগাদ যুবকের গোঙানির শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তড়িঘড়ি উঠে দেখেন, কেউ যেন দ্রুত গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল। আর যুবক বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছে। গৃহবধূর চিৎকারে পাড়া-প্রতিবেশী বাড়ির অন্যান্যরা ছুটে এসে দেখে, বীভৎস ঘটনা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, ততক্ষণে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পাড়া-প্রতিবেশীরা বাড়ির লোকেরা দৃশ্য দেখে আঁতকে ওঠেন।
পটাশপুর থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেহ উদ্ধার করে এবং গৃহবধূ ও সাত বছরের শিশুসন্তান এবং মৃত যুবকের মাকে থানায় নিয়ে গিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ঘটনাস্থলে গ্রামের প্রচুর মানুষের জমায়েত। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন ঘোড়ুই বলেন, ''দীর্ঘদিন ধরে এই বিয়ে নিয়ে সমস্যা চলছিল। কিন্তু এমন নির্মম খুনের ঘটনা যে ঘটিয়েছে তার শাস্তির দাবি জানাই।'' মৃতের পরিবারের সদস্য শংকর গিরির কথায়, ''মৃত দীপঙ্কর অন্যের একজন স্ত্রীকে বিয়ে করে বাড়িতে এনেছিল। ওই স্ত্রীর প্রথম স্বামীরই কাজ এটা সম্ভবত।'' মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, এটি একেবারেই খুনের ঘটনা।তদন্ত চলছে।