shono
Advertisement

মুছে যায়নি ঐতিহ্যের খাগের কলম, সরস্বতী পুজোর আগে জমজমাট বিক্রি পুরুলিয়ায়

শহর পুরুলিয়ার দশকর্মার ভাণ্ডারগুলিতে এখন খাগের কলমের ব্যাপক চাহিদা, খুশি বিক্রেতারাও।
Posted: 03:56 PM Feb 09, 2024Updated: 03:56 PM Feb 09, 2024

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আসছে সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja)। কুমোর পাড়া থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সর্বত্র তুঙ্গে প্রস্তুতি। তবে ইদানিং নানা আচারই ফিকে হয়ে আসছে। উত্তরবঙ্গের নদীর চরগুলি বদলে যাওয়ায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে নলখাগড়ার বন। খাগের কলম এখন দুষ্প্রাপ্য। নিয়মরক্ষায় থার্মোকলের কলম দিয়ে বাকদেবীর আরাধনার আয়োজন করা হচ্ছে। কিন্তু পুরুলিয়ায় (Purulia) ছবিটা উলটো। দোয়াত, কলম বা খাগের কলমের ঐতিহ্য আজও মুছে যায়নি। বিদ্যার দেবীর এই আরাধনার অন্যতম প্রধান উপাদান খাগের কলম ও দোয়াতের বাণিজ্য সরস্বতী পুজোকে ঘিরে আজও জমজমাট।

Advertisement

ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা এই জেলায় সরস্বতী পুজোয় কম-বেশি পাঁচ লক্ষ খাগের কলম বিক্রি হয়ে থাকে। পুজোর প্রায় এক পক্ষ কাল আগেই কলকাতার বড়বাজার থেকে এই জেলার দশকর্মা দোকানের মালিকরা ওই কলম নিয়ে আসেন। শহর পুরুলিয়ার ছোট দশকর্মা ভাণ্ডারে বসন্ত পঞ্চমীর এই পুজোয় পাঁচ হাজারেরও বেশি খাগের কলম বিক্রি হয়। সবমিলিয়ে সমগ্র জেলায় সংখ্যাটা ৫ লক্ষ ছাড়িয়ে যায় বলে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান। শহরের চকবাজারের দশকর্মা দোকানের মালিক নিখিলেশ দাস বলছেন, “পুরুলিয়ায় কিন্তু খাগের কলমের ঐতিহ্য হারিয়ে যায়নি। সরস্বতী পুজোয় তা দেদার বিক্রি হয়। সঙ্গে দোয়াত ও কালি বড়ি। আমার মত ছোট দোকানেই পাঁচ হাজার খাগের কলম নিয়ে এসেছি। সমগ্র জেলা মিলিয়ে কম-বেশি পাঁচ লাখ তো বিক্রি হয়ই।”

[আরও পড়ুন: ‘রিভাবার জন্যই সংসার ভেঙেছে! ছেলের মুখ দেখি না’, বিস্ফোরক জাদেজার বাবা]

আসলে এই কলম দিয়ে যে লেখেন বিদ্যার দেবী! সেই ঐতিহ্য তো অটুট রাখতেই হবে। দোয়াতে লাল রঙা একটি কালি বড়ি ফেলে দুধ ও সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে খাগের কলমে লেখা হয়। এই পুজোকে ঘিরে আচার রয়েছে, পঞ্চমী তিথি ছেড়ে গেলে পুজোর পরের দিন স্নান সেরে একটি কলাপাতায় সেই দুধ ও খাগের কলম দিয়ে লিখতে হয়, “ওম নমঃ সরস্বতী মাতা নমঃ”। তার পরই কুল খাওয়ার অনুমতি মেলে পড়ুয়াদের। কিন্তু কুল পুজোর আগে পেটে চলে গেলেও দোয়াত ও খাগের কলমকে নিয়ে লেখার আচার আজও রয়েছে এই জেলায়।

বাগদেবীর আরাধনার অন্যতম উপকরণ খাগের কলম। নিজস্ব চিত্র।

তবে বিভিন্ন স্টেশনারি ও বইয়ের দোকানে বছরের অন্যান্য সময় কালির দোয়াত বা কালির পেন সেভাবে দেখা পাওয়া যায় না। এখন সামান্য যে ঝরনা পেন বিক্রি হয় তা কারটিজের। এই কারটিজের ৩০ টাকা দাম লেখা থাকলেও তা বিক্রি হয় ২৭ টাকায়। তবে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে দোয়াত ও কালি কলম বিক্রি হয়ে থাকে। ২৫ টাকা থেকে শুরু হওয়া এই কালি কলম প্রায় ৭০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। পুরুলিয়া শহরের চকবাজারে খাতা, কলম-সহ স্টেশনারি দোকানের মালিক পুণিত দীক্ষিত বলেন, “পুরুলিয়া কিন্তু ঐতিহ্যটা ধরে রেখেছে। আর সেই কারণেই আমাদের সরস্বতী পুজোর সময় কালির কলম, দোয়াত নিয়ে আসতে হয়। বিক্রিবাটা খুব একটা খারাপ হয় না।”

[আরও পড়ুন: কিশোর পড়ুয়ার সঙ্গে দিনের পর দিন সঙ্গম শিক্ষিকার, জেরায় কবুল করলেন বিবাহিতা তরুণী]

কলমের ইতিহাস শুরু হয় প্রায় ৫ হাজার বছর আগে। প্রাচীন মিশরীয়রাই প্রথম এই কলম ব্যবহার করা শুরু করেন বলে কথিত রয়েছে। সেই সময় লেখার জন্য কোন কাগজ ছিল না। বিভিন্ন গাছের পাতা, বাকলের উপর লেখা হতো। লেখা হতো পাখির পালকেও। রাজহাঁসের পালক ছিল সেই সময় কলম তৈরির প্রধান উপকরণ।

দেখুন ভিডিও: 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement