সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: শেষরক্ষা হল না। পালাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরাই পড়তে হল মগরাহাট জোড়া খুন (Mograhat Murder Case) কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত জানে আলম মোল্লাকে। কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ ও মহকুমা পুলিশের এক বিশেষ তদন্তকারী দল রবিবার সকালে কলকাতার চারুমার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে। খুনের ঘটনার পরই গা ঢাকা দিয়েছিল সে। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ ওই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করায় নিহত দুই যুবকের শোকার্ত পরিবার ও প্রতিবেশীরা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।
মগরাহাটের মাগুরপুকুরে এক সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ দুই যুবককে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করে শনিবার দুপুরেই নিজের গাড়িতে চড়ে পালিয়েছিল অভিযুক্ত জানে আলম মোল্লা। নিহতদের পরিবার ও প্রতিবেশীদের পুলিশ আশ্বাস দিয়েছিল চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হবে। তখন থেকেই তাকে ধরতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিল ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ চন্দ্র ঢালি ও ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিওর নেতৃত্বে ৬টি দলে ভাগ হয়ে রাতভর চলে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি। তার মোবাইল টাওয়ার লোকেশনও ট্র্যাক করার চেষ্টা চালায় পুলিশ। শেষপর্যন্ত কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ অভিযুক্ত জানে আলমকে কলকাতার চারুমার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তার গাড়িটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়।
[আরও পড়ুন: ‘স্বর্গে আবার দেখা হবে মা’, রুশ গোলায় নিহত মহিলাকে চিঠি লিখল ছোট্ট মেয়ে]
জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই অভিযুক্ত জানিয়েছে, দু’টি খুনই সে নিজেই করেছে। মলয় মাখালের বকেয়া পাওনা টাকা ফেরত দিতে শনিবারই নিজের কারখানায় মলয়কে ডেকে পাঠায়। মলয়ের সঙ্গে ওই কারখানায় গিয়েছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার বরুণ চক্রবর্তীও। সেখানেও টাকা পরিশোধ করতে টালবাহানা করায় ওই দুই যুবকের সঙ্গে জানে আলমের বচসা বাধে। তখনই নিজের লাইসেন্সড রিভলবার থেকে গুলি চালিয়ে দু’জনকেই হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই যুবককে সে কোপায়। এরপর পরিকল্পনা করে দেহ দু’টি টুকরো টুকরো করে লোপাট করার। কিন্তু খুনের ঘটনার কথা এলাকায় চাউর হয়ে যাওয়ায় সে সময় আর পায়নি অভিযুক্ত। কারখানার গেটের বাইরে যখন উত্তেজিত জনতা জড়ো হতে শুরু করে তখনই বিপদ বুঝে নিজেই গাড়ি চালিয়ে এলাকা ছেড়ে পালায় সে।
অভিযুক্তের গতিবিধি নজরে রাখতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে শনিবার বিকেলের দিকে কলকাতা ও বিধাননগর থানা এলাকায় গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। বিধাননগর ও কলকাতা পুলিশকে সতর্ক করা হয়। তার মধ্যে ফোনে একবার বাড়ির লোকের সঙ্গেও যোগাযোগ করে অভিযুক্ত। এমনকি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পার্কিং লটে গাড়ির মধ্যেই অভিযুক্ত সারারাত কাটিয়েছে বলে জানতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, এ রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে ঝাড়খণ্ড এমনকি বাংলাদেশেও পালানোর পরিকল্পনা ছিল তার।
বাংলাদেশে জানে আলমের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মীনা বিবির বাপের বাড়ি। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে টালিগঞ্জ রেলওয়ে আন্ডারপাসে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট তাঁর এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় জানে আলমের গাড়ির নম্বর দেখে চিহ্নিত করেন এবং টালিগঞ্জ ট্রাফিক গার্ড অফিসকে সতর্ক করেন। আর সেই খবর পাওয়ামাত্রই টালিগঞ্জ ফাঁড়ির ট্রাফিক গার্ডের অফিসাররা গাড়িটি আটকানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। গাড়িটিকে আটকানো হয়। অ্যাডিশনাল ওসি পুলকেশ চৌধুরী একটি নাইন এম এম পিস্তলও উদ্ধার করেন। গ্রেপ্তার হয় অভিযুক্ত জানে আলম মোল্লা। ধৃতকে সোমবার ডায়মন্ড হারবার এসিজেএম আদালতে তোলা হবে। তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আরজি জানাবে পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র আইন ও সংগঠিত অপরাধমূলক কাজের মামলা রুজু করা হয়েছে। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে জোড়া খুনের ঘটনায় আর কেউ জড়িত ছিল কিনা নিশ্চিত হবে পুলিশ।