বাবুল হক, মালদহ: দাউদাউ করে জ্বলছে ঘর। পিছনে পৈশাচিক উল্লাস। কান্না চেপে বাড়িঘর, ভিটেমাটি ছেড়ে এক কাপড়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে পাশের জেলায়। দৌড়নোর সময় কানে আসছিল একটাই কথা, 'আগুন জ্বলছে। ধরে এনে ফেলে দে।' সোমবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে সামনে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মুর্শিদাবাদের ঘরহারা মহিলারা। একইসঙ্গে দোষীদের শাস্তির দাবিও করলেন। বিএসএফ ক্যাম্প তৈরি করে তারপরই যেন তাঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়, আরজি জানালেন ভিটেমাটিহারারা।

ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় উত্তাল হয়েছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ান। প্রাণ গিয়েছে তিনজনের। জ্বলেছে পুলিশের গাড়ি, বাড়িঘর, দোকান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার রাত থেকে নেমেছে বিএসএফ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শনিবার রাত থেকে আধা সেনাও নামানো হয়। লাগাতার অশান্তির জেরে একাধিক গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে বহু পরিবার। তাদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা। সুকান্তর অভিযোগ, এই মহিলাদের সম্মানহানির চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতীরা। কতজনকে বাঁচানো গিয়েছে তা নিয়েও সন্দিহান তিনি। ঘরহারা পরিবারগুলি আশ্রয় নিয়েছে পড়শি জেলা মালদহের বৈষ্ণবনগরের বিভিন্ন স্কুলে। এদিন মালদহে গিয়ে পারলালপুর হাই স্কুলে আশ্রিতদের সাথে দেখা করতে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি। সেখানে তাঁদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন এবং তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তিনি শোনেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুর্শিদাবাদের ঘরহারারা।
ভিটেমাটিহারা কল্পনা মণ্ডল বলেন, "বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ছুটতে পারি না। তারপরেও দৌড়ে প্রাণ বাঁচিয়েছি। পিছন থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম, 'আগুন জ্বলছে। ধরে এনে ফেলে দে।' আর ফিরতে পারব কি না জানি না।" ভিটেছাড়াদের দাবি, "ওখানে ক্যাম্প বসাতে হবে। না হলে আমরা ফিরলে আবার মারবে।" তাঁদের কথা মন দিয়ে শোনেন সুকান্ত। তিনি জানান,"আমরা জেলায়-জেলায় এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব। আমরা কোর্টে যাব। মানে একদিকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়ব। আর অন্যদিকে আইনি পদ্ধতিতে লড়ব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহজি-কে পুরো বিষয়টা বলব এবং আমি বিরোধী দলনেতার সাথে আজকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।" তাঁর আরও অভিযোগ, "কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। কোর্টের কাছে আমরা আবেদন রাখব যাতে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঠিকভাবে কাজ করতে দেয়।"