অভিষেক চৌধুরী, কালনা: মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই মা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ছেলে তন্ময় দাসকে বাড়ি থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে, কালনার পূর্ব সাতগাছিয়ায় হিন্দু মিশন বয়েজ ওয়েলফেয়ার হোম নামের সরকারি এক আবাসিক হোমে ভর্তি করেন বাবা তাপস দাস। মায়ের দুঃখ ভুলে তন্ময়ও দাদু-ঠাকুমা ও বাবার স্নেহছায়ায় বড় হয়ে উঠছিল। গত রবিবার শীতলা পুজোয় হোম থেকে বাড়িও আসে ১১ বছরের তন্ময়। তারপর ফিরেও যায়। কিন্তু সেটাই যে তার শেষ যাওয়া সেটা জানত না কেউই। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যুতে রহস্য দানা বেঁধেছে। দুর্ঘটনা মানতে নারাজ পরিবার। কর্তৃপক্ষের কড়া শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয়সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার কয়েকজন আবাসিক পড়ুয়া দোতলার বারান্দায় খেলা করছিল। সেই সময় তন্ময় নামের ওই কিশোরও উপরে ও নিচে ওঠা-নামা করছিল। এমন সময় সে দোতলার বারান্দার ভিতর থাকা একটি বাঙ্কে ওঠে। সেখান থেকে সে পড়ে যায়। হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই দুর্ঘটনার পর ওই খুদে আবাসিকরাই তাদের খবর দেয়। তারপরই তন্ময়কে কালনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এক খুদে আবাসিক জানায়, "তন্ময়ের সঙ্গে আমরা খেলা করছিলাম। তন্ময় উপরে ওঠে। আমরাও এদিকে উঠলাম। তন্ময় নামতে গিয়ে মুখ থুবড়ে শানের উপর পড়ে। এরপরেই ছুটে এসে আমরা ওকে তুললাম। জল খাওয়ালাম। স্যরকে ডাকলাম। বড় ছেলেরাও এল। মাসী ও স্যরেরা গায়ে তেল লাগাচ্ছিল। এরপরে গাড়ি এসে ওকে নিয়ে যায়।"
যদিও এটিকে দুর্ঘটনা বলে মানতে নারাজ তন্ময়ের বাবা তাপস দাস। শুক্রবার তিনি দাবি করেছেন, সিসিটিভি ফুটেজে যা ছবি দেখা গেছে, তা তার ছেলের নয়। শুধু তাই নয়, তার ছেলেকে অকারণে হোম কর্তৃপক্ষ শাসাত বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। এই ঘটনার পর হোম কর্তৃপক্ষের কড়া শাস্তির দাবি তোলেন তিনি। যদিও মাস এডুকেশনের ডিরেক্টর উপালি রায়-সহ দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে এসে সব কিছু খতিয়ে দেখেন। যদিও হোমের সুপারিনটেনডেন্ট শুভ্র মুখোপাধ্যায় জানান, "ঘটনার সময় অন্য বাচ্ছারাও ছিল। পুলিশকেও তারা জানায়,তারা খেলা করছিল। সেইসময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেই শুনেই ছুটে যাই।"
যদিও এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, হোম কর্তৃপক্ষের নজরদারির গাফিলতি নিয়ে। নজরদারি ঠিক থাকলে এই ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত বলেই দাবি অনেকের। যদিও হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, হোমটিতে সবরকমের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা রয়েছে। ১৪৭ জন পড়ুয়া রয়েছে। তেত্রিশটি সিসিক্যামেরাও রয়েছে, যা পর্যাপ্ত। যদিও ঘরের ভিতরগুলিতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য তারা এদিন কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগকে আবেদন জানালে তিনি তার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানান।