সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বেয়াড়া দলছুটদের সবক শেখাতে দক্ষিণবঙ্গে দাপিয়ে বেড়ানো বুনো হাতিদের ঠিকুজি-কোষ্ঠী তৈরি করছে বন দপ্তর। অনলাইন এই তথ্যপঞ্জিতে এক ক্লিকেই চোখের সামনে ওই দাঁতালদের গতিবিধি ভেসে উঠবে। যাতে সহজেই বনাঞ্চলে থাকা ওই বুনো হাতিদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে খোদ অরণ্য ভবন। তাই অনলাইনে ঠিকুজি-কোষ্ঠীকে সাধারণভাবে এক জায়গায় নিয়ে আসতে তৈরি হচ্ছে পোর্টাল। যার পোশাকি নাম ডব্লুবি ডট এলিফ্যান্টস ডট ইন।

আগামী ১ এপ্রিল অরণ্য ভবনে এই পোর্টালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায়। তিনি বলেন, ‘‘ওই পোর্টালের মধ্য দিয়ে হাতিরা যেখানে অবস্থান করছে, সেই এলাকার গুগল ম্যাপ-সহ যাবতীয় তথ্য সামনে আসবে। এই কাজের মধ্য দিয়ে সহজ হবে বুনো হাতিদের ওপর নজরদারি চালানো। বছর শেষে বোঝা যাবে কোন এলাকায় কত হাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। হাতি-মানুষের সংঘাত এড়াতেই এই কাজ।’’
দক্ষিণবঙ্গে বনদপ্তরের যে চারটি চক্র রয়েছে, তার মধ্যে তিনটি চক্রে হাতিদের যাওয়া-আসা সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ-পশ্চিম চক্রের পুরুলিয়া, কংসাবতী উত্তর, কংসাবতী দক্ষিণ। কেন্দ্রীয় চক্রের মধ্যে রয়েছে বাঁকুড়া উত্তর, বাঁকুড়া দক্ষিণ ও পাঞ্চেত। পশ্চিম চক্রে মেদিনীপুর, রূপনারায়ণ, খড়্গপুর, ঝাড়গ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক রয়েছে। ওই তমলুক বিভাগে হাতিদের একেবারেই যাওয়া আসা নেই। তবে দক্ষিণ-পূর্ব চক্রের বর্ধমান, বীরভূম ও পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরেও হাতি ঢুকে পড়ে মাঝেমধ্যে। তবে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর জেলা ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের বাকি জেলাগুলি মূলত হাতিদের ট্রানজিট জোন হিসাবেই পরিচিত।
জঙ্গলমহলের জেলাগুলির মধ্যে পুরুলিয়া, কংসাবতী দক্ষিণ, বাঁকুড়া উত্তর, বাঁকুড়া দক্ষিণ, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, রূপনারায়ণ বনবিভাগে স্থায়ীভাবে বসবাস করে হাতির দল। যেমন বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগে প্রায় আড়াই মাস ধরে ৬০-৭০ টি হাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। একইভাবে পুরুলিয়া বন বিভাগের বাঘমুণ্ডি ও অযোধ্যা বনাঞ্চলের সীমান্তে প্রায় একমাস ধরে ১২টি হাতি অবস্থান করছে। বুনো হাতিদের এই ঠিকুজি-কোষ্ঠী অনেকটা বাঘেদের তথ্যপঞ্জি তৈরির মতোই। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ডোরাকাটার ধরন দেখে যেমনভাবে তাদের চিহ্নিত করে ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। এবার থেকে ঠিক সেভাবেই অরণ্য ভবন দক্ষিণবঙ্গে বসবাস করা সব হাতির তথ্যপঞ্জি তৈরি করে তদারকি করবে।
রাজ্য বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তথ্যপঞ্জিতে দলছুট ছাড়াও বিভিন্ন দলের হাতিদেরও বিশদ বিবরণ মিলবে। মূলত দলছুট হাতিদের ধরে ধরে স্বভাব, প্রকৃতি, বয়স, ওজন, উচ্চতা, কান, লেজের ধরনের বিবরণ থাকবে। তাছাড়া এযাবৎকালে তারা কোথায় কী হামলা করেছে, তাদের হামলায় কতজন মানুষের, কবে, কোথায় মৃত্যু হয়েছে? তাও তালিকাভুক্ত হবে ওই পোর্টালে। ফি-দিন প্রত্যেকটি বিভাগ থেকে আসা তথ্য হাতিদের গতিবিধি অনুযায়ী আপডেট হবে। বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিক ও কর্মীরা তাদের নিজেদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হাতির অবস্থান জানতে পারছেন।
এই পোর্টালের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট চক্র, জেলা, বনবিভাগ, রেঞ্জ, বিট, মৌজা অনুযায়ী তথ্য ভেসে উঠবে মাউসের এক ক্লিকেই। সেই সঙ্গে হাতির অবস্থানের গুগল মানচিত্র। ধীরে ধীরে এই পোর্টালে হাতিদের খাবারের জন্য যে এলাকায় চাষ হবে, সেই বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট জায়গায় ক্লিক করলে দেখা যাবে। এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক হয় মেদিনীপুরে। সেখানে বিভিন্ন বনবিভাগের এডিএফও অর্থাৎ যারা হাতিদের নোডাল আধিকারিক, তাঁরা ছাড়াও একজন করে রেঞ্জ আধিকারিক ও কারিগরি বিষয়ক কর্মীরা হাজির ছিলেন। বনকর্তাদের তত্ত্বাবধানে হাতে-কলমে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।