শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: রাজ্যের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোই প্রচারের হাতিয়ার এবার বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর! ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দস্তুরমতো তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের প্রকল্প, পরিষেবার প্রচার করেই ভোট চাইছে সদ্য জোড়া ঘাসফুল শিবির ছেড়ে হাত শিবিরে আসা প্রার্থী। এমনই দৃশ্য দেখা গেল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েত (Panchayat Poll) এলাকায়।
রায়গঞ্জ শহর ছেড়ে প্রায় বাইশ কিলোমিটার দূরে এ দেশের শেষপ্রান্ত বিন্দোল। সীমান্ত এই পঞ্চায়েতের ১৮টি গ্রাম সংসদে মধ্যে ১০৯ নম্বর বুথ বিন্দোল গ্রাম। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের হাত চিহ্নে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান লায়লা খাতুনের স্বামী মনসুর আলি। ২০০৮ এ কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য হয়ে বিন্দোল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পদে নিযুক্ত ছিলেন। তারপর দলবদল করে ১৮ এর পঞ্চায়েত ভোটে বিন্দোল বুথ থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়লাভ করে পঞ্চায়েত প্রধান হয়েছিলেন মনসুরের স্ত্রী লায়লা খাতুন। কিন্তু বছর গড়াতেই পঞ্চায়েতের একাধিক প্রকল্পে খরচে আর্থিক গরমিলের অভিযোগে প্রধান পদ থেকে স্ত্রীকে সরিয়ে দেয় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তারপর থেকেই কার্যত শাসক শিবিরের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায় তাঁকে। এই পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণার পরেই তৃণমূলের দলীয় পতাকা খামে ভরে দলীয় জেলা সভাপতির কাছে ডাকযোগে পাঠিয়ে তৃণমূল ত্যাগ করেন তিনি। শেষপর্যন্ত পুরনো দলে ফিরে এবার কংগ্রেসের প্রার্থীপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: আচমকাই ‘নাটক’! মহারাষ্ট্রের উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অজিত পওয়ার]
পালপাড়া, ক্যাম্পপাড়া, উত্তর বাজে বিন্দোল (একাংশ), মোড়লটলি,শক্তিপাড়া কিংবা হাটখোলা প্রভৃতি পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে রীতিমতো মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘লক্ষ্মী ভান্ডার’প্রকল্প-সহ একগুচ্ছ জনমুখী প্রকল্পের প্রচারে দেখা গেল কংগ্রেস প্রার্থীকে। শনিবার বৃষ্টির সকাল থেকে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কংগ্রেস প্রার্থী মনসুর আলি পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে ভোটারদের বাড়ির উঠোনে গিয়ে প্রচার করতে দেখা গেল। লক্ষ্মীভান্ডার থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী, রুপশ্রী কিংবা নিখরচায় চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড এবং স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রভৃতি পরিষেবার প্রশংসা করতে করতে কংগ্রেস প্রার্থী মনসুর আলি বলেন,”গত পাঁচ বছর লক্ষ্মী ভাণ্ডার প্রকল্প ৩৫৮ জন মহিলাকে দেওয়া হয়েছে,এছাড় সমব্যথী প্রকল্পের পাশাপাশি বার্ধক্য ভাতা ও বিধবা ভাতায় জন্য প্রায় শতাধিক পরিবার উপকৃত হয়েছে। রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেও সরকার সবার। তাই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা সবদলের লোকজন পেয়েছে, সেটা প্রচারের কোন আপত্তি নেই।” এই বুথে মোট ভোটার ১২৬৮টি।
তবে বিন্দোল বুথে বাম কংগ্রেস প্রার্থীর প্রতিপক্ষে তৃণমূলের প্রার্থী সাহাজান আলি অবশ্য বলেন, “তৃণমূলের সরকার যে কাজ করেছে,তা কংগ্রেস প্রার্থীও স্বীকার করছেন। এটাই ভোটাররা বুঝতে পারলেই তো আর আলাদা করে প্রচার দরকার নেই।” তবে ওই গ্রাম সংসদের বিজেপির প্রার্থী অভিজিৎ পালের দাবি, “রাজ্য সরকার কোনও দলের নয়। সেখানের সকলেই পরিষেবা পাওয়ার যোগ্য। সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই।” তবে পালপাড়ার ভোটার দ্বিজেন্দ্রনাথ পাল আবেগ তাড়িত গলায় বলেন,”মনসুর অনেক উপকার করেন, সে কোন দল করল সেটা দেখে আমার কী লাভ। পাঁচ বছর ধরে ওর জন্য পরিষেবা পাচ্ছি।” একই সুর সুকুমার সাহা থেকে কল্পনা মাহাতদের। আর তাই বিভিন্ন বাসিন্দাদের পাশাপাশি এলাকার ঐতিহাসিক ভৈরবী মন্দিরে আসা বিভিন্ন দর্শনার্থীদের কাছেও রাজ্য সরকারের প্রকল্পের প্রচারে সামিল কংগ্রেস প্রার্থী। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল একধাপ এগিয়ে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্প যে দলমত নির্বিশেষে প্রদান করা হয়,তা গত পাঁচ বছরে এলাকা মানুষ বুঝতে পারছে,তা হলে জয় তো তৃণমূলের।”