ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: গাঁ-দেশের মেয়ে। সেই মেয়ে পথে নেমে হাত-পা ছুড়ে মার্শাল আর্ট (Martial Art) শিখছে! কেমন দেখায় ব্যাপারটা? পাড়া ঘুরে এসএফআইয়ের (SFI) সদস্যরা প্রথমে যখন এই ভাবনা অভিভাবকদের কাছে প্রস্তাব আকারে রাখেন, তখন শুনেই গুটিয়ে গিয়েছিলেন সকলে। কিন্তু তাঁদের বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজি করা গিয়েছে।
বিষয় হল, গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ দেবে এসএফআই (SFI)। যার পোশাকি নাম ‘মিশন প্রীতিলতা’। বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সম্মানেই এই শিবিরের নামকরণ করেছে এসএফআই।
এ পর্যন্ত দু’-একটি জায়গায় ছোটখাটো পরীক্ষামূলক শিবির হলেও বড় আকারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও শিবির হয়নি। বসিরহাটের (Basirhat) টাউন হল চত্বরে সেই প্রশিক্ষণ এবার শুরু করল এসএফআই। রবিবারই তার সূচনা হয়ে গেল। এসএফআইয়ের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক আকাশ কর বলছেন, “যেভাবে ধর্ষণের ঘটনা একের পর এক বাড়ছে, তাতে ছাত্রীদের প্রাথমিক পাঠ দেওয়ার কথা ভেবেই আমাদের এই পদক্ষেপ।” মাটিয়া, দেগঙ্গার মতো জায়গায় ইতিমধ্যে এই ধরনের একাধিকবার অভিযোগ সামনে এসেছে বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন আকাশ। তাঁর অভিযোগ, “প্রশাসন তো নারী সুরক্ষা দিতে পারছে না। আমরাই তাই শিবির করে ছাত্রীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর এই কাজটুকু করতে চাই যাতে প্রাথমিকভাবে লড়ে পিটে পালিয়ে যাওয়ার কৌশল তাদের জানা থাকে।”
[আরও পড়ুন: ঝালমুড়ির আড়ালে মৃত্যু পরোয়ানা! যুবকের প্রাণ বাঁচালেন বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসকরা]
মার্শাল আর্টের কিছু ফর্মকে ব্যবহার করে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বসিরহাট (Basirhat) সাব ডিভিশন তিন-চারটে ক্যাম্প করে। যার প্রথমটাই হল বসিরহাট শহরের টাউন হল চত্বরে। এই ক্যাম্পে স্থানীয় স্কুল-কলেজের জনা ৫০ ছাত্রী থাকবে। তার মধ্যে বসিরহাট কলেজ, টাকি গভর্নমেন্ট কলেজের পাশাপাশি কয়েকটি স্কুলের ছাত্রী রয়েছে। শুধু বাড়ি গিয়েই নয়, ছাত্রীদের অভিভাবকদের মার্শাল আর্টের গুরুত্ব বোঝাতে পাড়ার কোচিং ক্যাম্পে গিয়েও যোগাযোগ করা হয়েছে। সাধারণ ছাত্রীদের পাশাপাশি বাম-মনস্ক বা সরাসরি এসএফআইয়ের সদস্য কলেজের এমন ছাত্রীরও যোগ দেওয়ার কথা এই শিবিরে। তাতে ছাত্রীদের পরিবার, তাঁদের বাবা-মা শেষপর্যন্ত রাজি হয়ে মত দিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন আকাশ।
[আরও পড়ুন: বাংলার মেয়ের অসাধ্যসাধন, অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয় হুগলির পিয়ালির]
কারা দেবেন প্রশিক্ষণ? দলের সদস্য এমন তিনজন মহিলা প্রশিক্ষক আপাতত এই দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে একজন শাশ্বতী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে, একজন আবার ব্ল্যাকবেল্ট! জেলা সংগঠনের সদস্যদের কথায়, চার-পাঁচটা লোকাল কমিটি নিয়ে একটা করে শিবিরের আয়োজন হচ্ছে। যে ৫০ জনকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, তাঁদেরও অনুরোধ করা হবে বাকিদের শেখাতে। দ্বিতীয় শিবির হবে সন্দেশখালি, তৃতীয়টি হওয়ার কথা বাদুড়িয়া-স্বরূপনগরে।
প্রীতিলতার জন্মদিন ৫ মে থেকে এই শিবির শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ডিওয়াইএফআই-এর সর্বভারতীয় শিবির উত্তর ২৪ পরগনায় (North 24 Parganas) বসার জন্য সেদিকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এই জেলার সদস্যরা। তখন ওই নির্দিষ্ট দিনে এই শিবির আর করা হয়নি। ফলে রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই শিবির শুরু হল।