সুব্রত বিশ্বাস: হাওড়া স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে তারকেশ্বর লোকাল ছাড়বে ছাড়বে করছে। সকালের দিকে উপচে পড়া ভিড় ট্রেনে। যাত্রীদের ‘পড়ি-কি-মরি’ অবস্থা। এর মধ্যেই ট্রেনের কামরায় পেল্লায় বিষাক্ত গোখরো। আর দেখে কে? আতঙ্কে যে যেদিকে পারলেন হেলে পড়লেন। কেউ বা ঝাঁপিয়ে পড়লেন অফ-সাইডে, কেউ বা লাফিয়ে নামলেন স্টেশনে। চালকের কামরা থেকে ছয় নম্বর কামরায় যাত্রীদের এহেন দশায় আশপাশের কামরার যাত্রীরাও আতঙ্কে কামরা ছেড়ে নেমে পড়লেন প্ল্যাটফর্মে।
[আরও পড়ুন: পোড়খাওয়া মুখ নেই! বহরমপুরে দিলীপ ঘোষের পুরোহিতকেই প্রার্থী করল বিজেপি ]
প্ল্যাটফর্ম জুড়ে হইচই। ছুটে এল আরপিএফ, কুলি, হকাররা। তবে সাহস নেই কারও যে, হিসহিস শব্দে ফণা তোলা সাপের মুখোমুখি হবেন। প্রায় আধঘণ্টা ধরে ট্রেনের কামরায় ঘুরপাক খেল গোখরো। তিনবার বাঁক নিয়ে সাপটিকে মারতে তেড়ে গিয়েও পিছিয়ে এলেন ছানাওয়ালারা। বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়েও টিকিট পরীক্ষকের ভয় নেই যাত্রীদের। বরং টিকিট পরীক্ষকদের অনেকেই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই নমস্কার ঠুকে বললে, “তারকেশ্বর লোকাল। মানে বাবার শিষ্য, স্বয়ং নাগরাজ।” চালক-গার্ড সবাই এসে করজোড়ে প্রার্থনা করলেন৷ বললেন – এবার যাও।আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাপটি কামরার এদিও-ওদিক, কখনও বা সিটের উপরে উঠে যায়। পরে নিজেই অফ-সাইড দিয়ে লাফিয়ে লাইনে নেমে পড়ে।
লোকাল ট্রেনের কামরায় এভাবে বিষাক্ত সাপ ঢুকে পড়ায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। সাপ কামড়ালে কোনওরকম চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই হাওড়া স্টেশনে। ফলে আতঙ্কের নাগপাশে যাত্রীরা। হাওড়ার ডিআরএম ইশাক খান বলেন, ট্রেনটি সম্ভবত কারশেড থেকে আসেনি। সাপটি মাঝ পথ থেকে কামরায় চড়েছে। কারণ, কারশেড থেকে পুরো চেকিং করে তবেই স্টেশনে আসে ট্রেন। মাঝপথে সাপ চড়ে বসলে যে রেল নিরুপায়, তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন তিনি। ইঁদুর, আরশোলা তাড়ানোর জন্য রেলে ‘পেস্ট কনট্রোল’ বিভাগ রয়েছে, তবে সাপের উপদ্রব আটকানোর কোনও ব্যবস্থা নেই রেলে।
[আরও পড়ুন: প্রার্থী না পেয়ে গরু ধরে টানাটানি বিজেপির! জামুড়িয়ার দেওয়ালে ব্যঙ্গচিত্র]
কয়েক বছর আগে হিন্দমোটর-কোন্নগরের মাঝে একটি ট্রেনে সাপে কামড়ায় যাত্রীকে। হইচই হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কয়েক মাস আগে দিল্লিতে একটি দূরপাল্লার ট্রেনে স্লিপার কোচে সাপ বেরিয়ে পড়ায় আতঙ্ক ছড়ায়। সাপের ট্রেনের কামরায় চড়াটা অমূলক নয় বলে মনে করেছেন সাপ সম্পর্কে ওয়াকিবহল মহল। সাপ লাইনের উপর উঠে ট্রেনের কম্পাঙ্ক অনুভব করতে ভালবাসে। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে উঠে পড়তেই পারে সাপ, এমনটাই তাঁদের ধারণা। পরিস্থিত যাই হোক, মানুষ যে সাপকে ভয় পায় সে সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই। তাই রেলকে যথেষ্ট সাবধানী হতে হবে, দাবি যাত্রীদের।
The post তারকেশ্বর লোকালে গোখরো সাপ, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন যাত্রীরা appeared first on Sangbad Pratidin.
