দেব গোস্বামী, বোলপুর: ঐতিহ্য মেনেই এবছর শান্তিনিকেতনে পরিবেশ বান্ধব পৌষমেলা আয়োজনে বদ্ধপরিকর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠকে সারা হয়েছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির চূড়ান্ত উদ্যোগ। আজ অর্থাৎ রবিবার সন্ধ্যায় উদ্বোধন। এবারের আকর্ষণ প্রেসিডেন্সির সংশোধনাগারের আবাসিকদের বিশেষ অনুষ্ঠান।
২০১৯ সালের পর ফের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার আয়োজন করতে চলেছে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। রবিবার অর্থাৎ আজই রাত নটায় গৌর প্রাঙ্গনে বৈতালিক ও শান্তিনিকেতন গৃহে সানাইয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে চলেছে শতাব্দী প্রাচীন শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসব এবং পৌষমেলা। যাবতীয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জেলার পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় হস্তশিল্পী ও বোলপুরের ব্যবসায়ী সমিতি। ইতিমধ্যেই কড়া নজরদারির পাশাপাশি পর্যটক টানতে সবরকম সুব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। শনিবার হয়েছে শেষ মুহূর্তে বৈঠক। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের সভাকক্ষের যৌথ বৈঠকে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিনয় কুমার সোরেন, সভাধিপতি কাজল শেখ, বোলপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় সহ মেলার উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৯ সালের পর ফের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার আয়োজন। নিজস্ব চিত্র।
উপাচার্য বিনয়কুমার সোরেন জানান,"দীর্ঘ কয়েক বছর পর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মেলার আয়োজন হতে চলেছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট, জেলা প্রশাসন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পৌষ উৎসবের সূচনা হবে।" মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জানান,"শেষ পর্যায়ে চূড়ান্ত বৈঠকে এদিন পৌষমেলায় সবদিক দিয়ে বিশ্বভারতীর পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ও আনুষাঙ্গিক বিষয়ে পাশে দাঁড়ানো হয়েছে হস্তশিল্পী ও ব্যবসায়ীদের রুটি রুজির প্রশ্নেই।" বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান,"পরিবেশ বান্ধব মেলার পাশাপাশি চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনেই বিভিন্ন লোকমাধ্যম ছাড়াও বাউল, ফকির ভাদু, টুসু, কীর্তন, আদিবাসী সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষ্ঠান রয়েছে। তবে এবারে বিশেষ উল্লেখযোগ্য প্রেসিডেন্সির সংশোধনাগারের আবাসিকদের বিশেষ অনুষ্ঠান রয়েছে।" সভাধিপতি কাজল শেখ জানান,"মেলায় দূরদূরান্তের আগত পর্যটকদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসন থেকে সব রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ দিন ধরেই সর্বতভাবে পাশে দাঁড়ানো হয়েছে।" অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় জানান,"জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় ৩০০ সিসিটিভির ঘেরাটোপে ছাড়াও উড়বে ড্রোন। কন্ট্রোল রুমে বসে নজরদারি করবেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। থাকছে ১২টি অ্যান্টি ক্রাইম টিম। এছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ ছাড়াও মহিলা পুলিশদের নজরদারি। সবমিলিয়ে প্রায় দুই হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবেন। ওয়াচ টাওয়ার থেকে শুরু করে দূর দূরান্তের পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দে মেলা উপভোগ করার জন্য যাবতীয় বন্দোবস্ত করেছে জেলা প্রশাসন। শীঘ্রই মেলার চূড়ান্ত নকশা ও কিউআর কোড উদ্বোধন করবেন জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। যেখানে পর্যটক-সহ মেলার আগত সকলেই অনলাইনে যে কোনও সমস্যায় অভিযোগ জমা করতে পারবেন।"
পৌষমেলা। নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বভারতী পৌষমেলার যুগ্ম আহ্বায়ক ভ্রমর ভাণ্ডারী জানান,"মেলায় ১৭০০ বেশি স্টল থাকছে। এছাড়াও প্লাস্টিক বর্জিত পরিবেশবান্ধব মেলা হবে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় যাবতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।" ঐতিহ্যবাহী মেলা সুন্দর করতে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন বদ্ধপরিকর। শান্তিনিকেতন জুড়েই এখন সাজো সাজো রব। মেলার সবরকম প্রস্তুতি তুঙ্গে।