shono
Advertisement
Sonali Bibi

হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা, রাজ্যের ভূমিকায় খুশি অন্তঃসত্ত্বা সোনালি

তবে এখনও বাংলাদেশে রয়ে গিয়েছেন তাঁর স্বামী-সহ চারজন।
Published By: Subhankar PatraPosted: 09:36 AM Dec 07, 2025Updated: 09:51 AM Dec 07, 2025

স্টাফ রিপোর্টার, মালদহ ও নিজস্ব সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নিজভূমে ফিরেছিলেন শুক্রবার সন্ধ‌্যায়। আর নিজের গ্রামে পা রাখলেন শনি-সন্ধ‌্য়ায়। সেখানে দর্জিপাড়ায় প্রতিবেশীদের ভিড়ে ফিরেই আবেগে কান্নায় ভেঙে সোনালি বিবি। তারপর তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।রামপুরহাট মেডিক‌্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি ডা. পলাশ দাস জানিয়েছেন, ‘‘সোনালি বিবির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনওরকম অসুবিধা যাতে না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।” হাসপাতালে সোনালি শুধু বললেন, “যাঁর জন‌্য বেঁচে ফিরলাম, সেই মুখ‌্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, আমার সন্তানের নাম যেন তিনিই দেন। আমি তাঁর কাছে ঋণী, কৃতজ্ঞ।”

Advertisement

অন্তঃসত্ত্বা সোনালির পরিবার-সহ ছয়জনকে দিল্লি পুলিশ বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিলে অসম সীমান্ত দিয়ে তাঁদের সে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে ঠাঁই হয় তাঁদের। তারপর মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের হস্তক্ষেপে ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের নির্দেশে তাঁদের ফেরাতে তৎপরতা শুরু হয়। সঙ্গে আইনি লড়াই। প্রায় ৮ মাস পর মালদহের মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে নাবালক সন্তানকে নিয়ে নিজের দেশে ফিরলেও বাংলাদেশে রয়ে গিয়েছেন তাঁর স্বামী-সহ চারজন। তাঁদের নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই বাড়ি ফিরে খুশি চেপে রাখতে পারেননি সোনালি।

শুক্রবার সোনালি ও তাঁর ছেলেকে মালদহ মেডিক‌্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর শনিবার দুপুরে তাঁদের সরকারি খরচে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে বীরভূমের পাইকরের উদ্দেশে রওনা করানো হয়। বীরভূমে পৌঁছনোর পর এদিন পাইকর এলাকায় অ্যাম্বুল‌্যান্সেই তাঁকে সংবর্ধনা দেন স্থানীয়রা। এরপরই তাঁকে রামপুরহাট মেডি‌ক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোনালি হাসপাতালে বসেই বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাকে আবার নতুন জীবন দিয়েছেন। তাই আমার ছেলে হোক বা মেয়ে– নাম যেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দেন।”

হাসপাতালে সোনালির সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা ভুদু শেখ এবং মা জ্যোৎস্নাহারা বিবি। তাঁকে সেখানে দেখতে যান সাংসদ সামিরুল ইসলাম, যিনি এই বিষয়ে প্রথম থেকেই মুখ‌্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৎপর ছিলেন।  মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “ন‌্যায়কে ঢেকে রাখা যায় না। কলকাতা হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা সঠিকভাবে মানানো হয়নি। সব প্রমাণ দেখানোর পরেও তাঁকে ফেলে আসা হয় বাংলাদেশে। কেন্দ্রে চোখে কালো চশমা এঁটেছিল। শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলায়, এমন হেনস্তা মানা যায় না।” মন্ত্রী শশী পাঁজা ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, “সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কেন্দ্র এইসব পরিবারকে হেনস্তা করেছে। সোনালিরা শুধু কষ্টই পাননি, হেনস্তারও শিকার হয়েছেন।”

তবে দেশে ফিরলেও সোনালির স্বামী দানিশ শেখ এখনও বাংলাদেশে রয়ে গেছেন। এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন সোনালির বাবা। বাকি চারজন-সহ কবে তাঁর স্বামী দেশে ফিরতে পারবেন তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। ফিরে এসে নিজের আট বছরের ছেলে ও এখানে তাঁর মায়ের বাড়িতে থাকা মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই হাসপাতালে উঠেছেন সোনালি। এদিকে এদিন মালদহ হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময় সোনিলি বিবি দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘৮ মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে ছিলাম। দিল্লি পুলিশ আমাদের উপর অমানবিক অত্যাচার করেছিল। আমরা অনেক অনুরোধ করেছিলাম। তারপরও আমাদের বিএসএফকে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর দিল্লি যাব না। কোনদিনও যাব না। তবে বাংলাদেশ পুলিশ কোনও অত্যাচার করেনি।”

সোনালিদের বাংলাদেশ থেকে দেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ময়দানে নামেন। হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। উচ্চআদালত নির্দেশ দেয়, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু তারপরও কেন্দ্র কোনও তৎপরতা দেখায়নি। তখন সুপ্রিম কোর্টে গেলে সেখানেও নির্দেশ দেওয়া হয়, দ্রুত ফেরাতে হবে তাঁদের। বাংলাদেশের আদালতেও তাঁদের ছ’জনের জামিন মঞ্জুর হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মালদহের মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে সোনালি বিবি ও তাঁর নাবালক ছেলেকে ভারতে ফেরানো হয়। কিন্তু তাঁদের দু’জনকে ফেরানো হলেও সোনালির স্বামী দানেশ শেখ-সহ বাকি চারজন কোথায়? অভিযোগ, এখনও বাংলাদেশে আটকে রয়েছেন সোনালির স্বামী-সহ সুইটি বিবি ও তাঁর পরিবার। তাঁদের কবে দেশে ফেরানো হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্র বা বাংলাদেশ সরকার এখনও এই নিয়ে কোনও কথা বলেনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • নিজভূমে ফিরেছিলেন শুক্রবার সন্ধ্যায়। আর নিজের গ্রামে পা রাখলেন শনি-সন্ধ্যায়।
  • সেখানে দর্জিপাড়ায় প্রতিবেশীদের ভিড়ে ফিরেই আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
  • সোনালি বিবি শুধু বললেন, “যাঁর জন্য বেঁচে ফিরলাম, সেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, আমার সন্তানের নাম যেন তিনিই দেন। আমি তাঁর কাছে ঋণী, কৃতজ্ঞ।”
Advertisement