সৌরভ মাজি, বর্ধমান: নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ। গ্রেপ্তার হলেন কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষক। ধৃতের নাম শুভব্রত দত্ত। বীরভূমের সাঁইথিয়া থানা এলাকায় তার আদি বাড়ি। বর্তমানে বর্ধমান শহরের শাঁখারিপুকুর এলাকায় থাকে। ধৃতকে বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হলে বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আগামী সোমবার ধৃতকে পকসো আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
তবে কোচিং সেন্টারের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে নারাজ অনেক পড়ুয়া ও অভিভাবক। বৃহস্পতিবার বর্ধমান মহিলা থানার সামনে ও পরে আদালত চত্বরে ভিড় করেছিলেন বহু ছাত্রছাত্রী। অভিভাবকরাও এসেছিলেন। 'প্রিয়' শিক্ষককে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে বলে তাদের দাবি। ধৃতকে আইনি সহায়তা দিতে নিজেরাই চাঁদা তুলে ভালো আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেন। যদিও কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য কর্তব্যরত পুলিশ আদালত চত্বর থেকে তাঁদের সরিয়ে দেয়।
ধৃত শহরের পাড়াপুকুর এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারের অঙ্কের শিক্ষক। এক হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী সেখানে পড়তে যায়। অভিযোগ, একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহ করেন ওই শিক্ষক। বছর ষোলোর ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, তাঁর মেয়ের সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক দুর্ব্যবহার করে। কয়েকবার ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করে। চলতি বছরের মে মাসে ছাত্রীর সঙ্গে প্রথম ঘটনাটি ঘটে। গত আগস্ট মাসেও ফের একই ধরনের ঘটনা ঘটে। ছাত্রী বুধবার ঘটনার কথা তার পরিবারের লোকজনকে জানায়। বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানতে পেরে বুধবার রাতে ওই কোচিং সেন্টারেও চড়াও হয়। অভিযোগ, ওই শিক্ষককে মারধরও করা হয়। তার পর মহিলা থানার পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষককে আটক করে নিয়ে আসে। ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, নাবালিকাকে ধর্ষণের নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
এদিন ধৃতকে আদালতে পেশ করার সময় শতাধিক ছাত্রছাত্রী ভিড় করেছিল। এক ছাত্রীর কথায়, "আমি তিন বছর পড়ছি স্যরের কাছে। পড়াশোনার ব্যাপারে স্যর খুবই কড়া। কিন্তু আমাদের কারও সঙ্গে কোনওদিন খারাপ ব্যবহার করেননি। এমন অভিযোগ বিশ্বাসই হচ্ছে না আমাদের। স্যরকে ফাঁসানো হয়েছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। পুলিশ তদন্ত করে সত্য বের করুক। দোষ করলে শাস্তি পাক। কিন্তু বিনা দোষে যেন সাজা না পায়।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, "স্যর কারও সঙ্গে ওইরকম আচরণ করবেন, বিশ্বাস করতে পারছি না। সত্য উদ্ঘাটন করুক পুলিশ। কোনও প্রভাবশালীর 'পারিবারিক সম্মানরক্ষার' কারণে ওই শিক্ষককে যেন ফাঁসানো না হয়। দোষ করে থাকলে অবশ্যই শাস্তি হোক।"
এদিন ধৃতকে সিজেএম আদালতে পেশ করে ৭ দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় পুলিশ। মামলাটি পকসো আদালতে বিচার্য, সে কারণে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ৬ নভেম্বর ধৃতকে পকসো আদালতে পেশের নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম। সেখানেই পুলিশি হেফাজতের আবেদনের শুনানি হবে। ধৃতের মেডিক্যাল পরীক্ষার এদিন আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। তা মঞ্জুর করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক স্টেট মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানকে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম।