অর্ণব দাস: আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ব্লক এবং টাউন স্তরে সাংগঠনিক রদবদল আগেই করেছে তৃণমূল। এখন শুরু হয়েছে পুরসভার শাসক পদে বদল প্রক্রিয়া। সেইমত বারাসত এবং বনগাঁ দুই পুরসভার চেয়ারম্যান পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছিল তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। দলীয় নির্দেশ মেনে শুক্রবার বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন অশনি মুখোপাধ্যায়। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গড়ালেও ইস্তফা দেননি বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ। তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
গত বছর নভেম্বর মাসে উত্তর বারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আত্মঘাতী হওয়ার পর থেকে পদটি ফাঁকা ছিল। এদিন ভাইস চেয়ারম্যান পদে শপথ নিলেন শ্রীপর্ণা রায়। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকমাস আগে পুরসভাগুলিতে সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্টের ভিত্তিতে বারাসত এবং বনগাঁ পুরসভা এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদা অনুযায়ী নাগরিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থতা, সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্নতা, শহরে অটো ও টোটোর 'দৌরাত্ম্যে' লাগাম দিতে না পারার কারণ উঠে এসেছে। এর ভিত্তিতেই দুই পুরসভার চেয়ারম্যান বদলের সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল।
সেই নির্দেশমতো শুক্রবার দুপুরে বারাসত পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তাপস দাশগুপ্তের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন অশনি মুখোপাধ্যায়। সেই ইস্তফা নিয়ে মধ্যমগ্রাম জেলা তৃণমূল পার্টি অফিসে দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন বারাসতের সাংসদ তথা সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেন, "কাজের মূল্যায়ন তো একটা হয়েছেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটা নির্দিষ্ট পথে দলকে সুসংগঠিত করতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে রদবদল হতেই পারে। অশনি মুখোপাধ্যায় ব্যক্তিগত কারণ জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর পদত্যাগ গৃহীত হয়েছে।" মধ্যমগ্রামের বৈঠকের পর কাউন্সিলররা বারাসত পুরসভায় বোর্ড মিটিং করেন। যদিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না অশনি মুখোপাধ্যায়। বৈঠক প্রসঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান তাপস দাশগুপ্ত বলেন, "পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে সুনীল মুখোপাধ্যায়কে মনোনীত করা হয়েছে।" অশনি মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "দলের নির্দেশেই বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আমার বিশ্বাস সুনীল মুখোপাধ্যায়কে সামনে রেখে পুরসভার প্রশাসনিক কাজকর্ম ভালো চলবে।"
এদিকে, এদিন দুপুর তিনটে নাগাদ তৃণমূলের ১৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৫ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে পুরসভায় বৈঠক করেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ। কমবেশি তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর গোপাল বেরিয়ে যান। কিন্তু তিনি ইস্তফা দেননি বলেই খবর। এনিয়ে গোপাল শেঠের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তি বেড়েছে দলের অন্দরে। তবে, দলীয় নির্দেশ অমান্য করায় শনিবার গোপাল শেঠকে দলের তরফে চিঠি দেওয়া হবে বলেই জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর।
সূত্রের আরও খবর, বনগাঁর নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল দিলীপ মজুমদারের নাম উঠে এসেছে। তিনি দু'বারের কাউন্সিলর। বিগত বোর্ডে ৬ নম্বর ওয়ার্ড, বর্তমানে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রয়েছেন তিনি। উত্তর বারাকপুর পুরসভার নবনিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীপর্ণা রায় গত পুরসভা নির্বাচনে প্রথমবার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হয়ে কাউন্সিলর হন। তবে, সংগঠন পরিচালনায় তাঁর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে। অবিভক্ত জেলা তৃণমূলের যুব সংগঠন এবং পরবর্তীতে দমদম বারাকপুর সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূলের তিনি সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। শ্রীপর্ণা জানিয়েছেন, "চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নাগরিক পরিষেবা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করব।"
